কদিন আগেই শ্রমিকরা কাজের উদ্দেশ্যে বাসে চড়ে সিঙ্গাপুরের জুরং আয়ল্যান্ড যাওয়ার পথে অন্য আরেকটি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। মুহূর্তেই ২২ জন প্রবাসী শ্রমিক মারাত্মকভাবে আহত হন এবং তাদের দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রবাসীদের জন্য দুঃসংবাদ বয়ে আনে। শ্রমিকদের মনে অনেক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে গত দুই সপ্তাহে পাঁচজন প্রবাসী কর্মস্থলে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। দীর্ঘদিন বন্দিজীবন কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরে এভাবে মৃত্যুবরণ কিংবা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া কোনো প্রবাসীরই প্রত্যাশা ছিল না।
কোভিড-১৯ এ বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সিঙ্গাপুর সরকার প্রবাসী শ্রমিকদের যেই স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে জীবনকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিল তা যেন অনেকেই ভুলতে বসেছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এবং গত দুই সপ্তাহের মৃত্যুর পরিসংখ্যান শ্রমিকদের দৈনন্দিন চলার গতিকে অনেক শ্লথ করে দিয়েছে।
শ্রমিকরা মানসিকভাবে আরো দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি এ দেশের সরকার ইচ্ছা করলেই শ্রমিকদের যাবতীয় সমস্যা সমাধানে আরো নিশ্চয়তা বহন করতে পারে।
এ দেশের মানুষ হয়তো জানে না প্রবাসী শ্রমিকদের চাহিদাগুলো খুবই সীমিত। তারা কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করে এ দেশে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে আসে। তারা এ দেশে নিরাপদে কাজ করে অর্থ উপার্জনের নিশ্চয়তা খোঁজে। পরিবারকে সুখে রাখাই তাদের মূল চিন্তা-ভাবনা থাকে। কিন্তু এই দেশে এসে শ্রমিকরা যতটুকু শ্রম দেয় সেই তুলনায় কি তার মূল্য পায়? সত্যিই পায় না।
তাদের উপার্জন খুবই নগণ্য। অন্যদিকে তাদের থাকার পরিবেশ, যাতায়াতের পরিবেশ, সময়ের অপচয়, সুচিকিৎসা কিংবা অনিয়মিত বেতন এসব সমস্যায় তারা ভুক্তভোগী হয়। জীবনকে অসহনীয় করে তুলে। জীবন থেকে সময় ফুরিয়ে যায়। অনেকেই ব্যর্থ হয়ে এ স্বপ্নের শহরকে বিদায় জানিয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে যায়।
বিভিন্ন দেশে শ্রমিকরা যেমন তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে নেমে আন্দোলন করে, মিটিং মিছিল করে। দ্রুত সমাধানের পথ খুঁজে পায়। সিঙ্গাপুরে তা সম্ভব নয়। এ দেশে প্রবাসী শ্রমিকদের অনেক নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যার দরুন অনেক সমস্যা চার দেয়ালের ভেতর আবদ্ধ থাকে। কচ্ছপের গতিতে সমাধান হয় প্রবাসী শ্রমিকদের সমস্যা! তবুও সব কিছু জেনে এ দেশে মানুষ আসে স্বপ্নপূরণের প্রত্যাশায়। কারণ মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে!