দৈনিক প্রত্যয় ডেস্ক:যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির সাবেক নেতা জেরেমি করবিনের মতে, করোনাভাইরাস সংকট বিশ্ব বৈষম্যকে উন্মোচিত করেছে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরেছে, তবে মহামারিটি রাজনৈতিক মনোভাব বদলাচ্ছে বলে এক সুন্দর বিশ্ব হতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার আল–জাজিরার নতুন সোশ্যাল মিডিয়া অনুষ্ঠান ‘দ্য নিউ নরমাল’–এ প্রচারিত সাক্ষাৎকারে করবিন করোনাভাইরাস কীভাবে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধানকে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে আলোচনা করেন।
যুক্তরাজ্যের লকডাউনে লন্ডনে নিজের বাড়ি থেকে কাজ করা করবিন বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংকট আমাদের গ্রহটি কতটা অসম, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য অংশে আমাদের সমাজ কতটা অসম, সে বিষয়ে জোর দিয়েছে। করোনাভাইরাসের পরে এটা আর কখনো একই হতে পারে না। বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব আলাদা, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। দরিদ্রতম সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব সর্বাধিক, কৃষ্ণাঙ্গ এবং সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব এখনো বেশি।’
করোনা–উত্তর পৃথিবী নিয়ে করবিন বলেন, ‘কোভিড–উত্তর পৃথিবী ভিন্ন এক জায়গা হবে। এটা কেবল বৈশ্বিক পুনর্গঠন ও কৃচ্ছ্রসাধন হতে পারে না। আমরা জানি যে স্বাস্থ্যের সবার জন্য একটি বিপদ। এমনকি সুস্থ ও স্বাস্থ্যবানেরাও অসমতার ঝুঁকিতে রয়েছে।’
যুক্তরাজ্যে ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে এবং ১৩ হাজার ৭০০ মানুষ মারা গেছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে কনজারভেটিভ নেতৃত্বাধীন সরকার বৃহস্পতিবার আরও তিন সপ্তাহ লকডাউন বাড়িয়েছে। ৭ মে পর্যন্ত লকডাউন থাকবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যায়ে সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) দিতে ব্যর্থতার জন্য সরকারের সমালোচনা হচ্ছে।
করবিন বলেন, ‘করোনাভাইরাস আমাদের যা দেখিয়েছে, তা হলো আমরা কেবল সিস্টেমের মতোই স্বাস্থ্যবান, যা আমাদের অসুস্থ স্বাস্থ্যের হাত থেকে রক্ষা করে। যদি সবাইকে সুরক্ষা না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা সবাই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন বলল, করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকানোর জন্য প্রচুর পরীক্ষা করতে হবে, তারা ঠিক কথাই বলেছিল। আমরা যদি পরীক্ষা না করি, তবে কতজন করোনাভাইরাস রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন, তার প্রকৃত তথ্য আমরা পাব না।’
করবিন বলেন, বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তিনি মূলধারার গণমাধ্যম এবং অন্য রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাতে বেশি খরচ করতে চেয়েছিলেন বলে নিন্দা পেয়েছিলেন।
আল–জাজিরাকে করবিন বলেন, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে দাঁড়ানোর মাধ্যমে ১২ সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে এ সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হবে—তিনি এ আশা করেননি। শরণার্থীশিবিরগুলোয় করোনা হানা দিলে কী হতে পারে, তা নিয়ে আতঙ্কিত ছিলেন তিনি।
বৈশ্বিক পর্যায়ে করবিন অতিজনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী মানুষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এসব জায়গায় সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা কঠিন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে তহবিল বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় ধাক্কা খেয়েছেন করবিন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে আরও স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি হবে। সামনে এগোনোর একমাত্র উপায় হচ্ছে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবৈষম্য দূরীকরণে সহায়তা করার জন্য বিশ্ব পদক্ষেপকে সমর্থন করা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় অর্থায়ন বন্ধ না করে বরং সংস্থাটি আরও কীভাবে ভালো কাজ করতে পারে, তাতে সাহায্য করা।’
আশাবাদ ব্যক্ত করে করবিন বলেন, ‘করোনা সংকট রাজনৈতিক মনোভাব বদলাবে। ভবিষ্যতে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ দেখা যাবে।’