নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের আধুনিক সংবাদপত্রের অন্যতম পথিকৃৎ, সমকালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক গোলাম সারওয়ারের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৮ সালের আজকের দিনে ৭৫ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
ইত্তেফাকের তিন দশকের বার্তা সম্পাদক গোলাম সারওয়ার দৈনিক যুগান্তরেরও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ১৯৪৩ সালের ১ এপ্রিল বরিশালের বানারীপাড়ায় এক সল্ফ্ভ্রান্ত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মরহুম গোলাম কুদ্দুস মোল্লা ও মরহুমা সিতারা বেগমের জ্যেষ্ঠ সন্তান গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা, প্রগতিশীল মূল্যবোধ আর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সোচ্চার ছিলেন আজীবন। সাংবাদিকতার বাতিঘর খ্যাত প্রতিষ্ঠানতুল্য এই ব্যক্তিত্ব ষাটের দশকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। সেই থেকে একটানা পাঁচ দশকের বেশি সময় তিনি এই পেশায় মেধা, যুক্তিবোধ, পেশাদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা, অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনার নিরবচ্ছিন্ন চর্চায় নিজেকে এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন।
গোলাম সারওয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মানসহ এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতা পেশায় তার অভিষেক। একই বছর দৈনিক সংবাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সংবাদে কর্মরত ছিলেন। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন নিজ এলাকা বানারীপাড়ায়।
মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েক মাস বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে প্রধান সহ-সম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংবাদপত্রের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ বার্তা বিভাগে গোলাম সারওয়ারের সৃজনশীলতা, সংবাদবোধ ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এ দেশের সংবাদমাধ্যম জগতে উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মৃত্যুর আগে তিনি দৈনিক সমকালের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
মেধা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার উৎকৃষ্টতার কারণে গোলাম সারওয়ারকে অনেকেই ‘সাংবাদিকদের শিক্ষক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি ছিলেন এ দেশের সংবাদপত্রে সাফল্য ও পেশাদারিত্বের প্রতীক। তিনি বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
সৃজনশীল সাহিত্যে গোলাম সারওয়ারের অকৃত্রিম আগ্রহ ও উদ্যোগ তার সৃষ্টিশীলতা ও প্রাণময়তার আরেক ক্ষেত্র। দৈনিক পত্রিকায় সাহিত্যকে তিনি মানে ও মর্যাদায় স্বতন্ত্র করেছেন। পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ছড়াকার; ষাটের দশকে অসংখ্য ছড়া লিখেছেন। সত্তর দশকেও ছড়ায় সচল রেখেছিলেন নিজের কলম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতে এক সময় তিনি ছিলেন ঘনিষ্ঠ। তার লেখা বেশ কয়েকটি গান আজও শ্রোতাহৃদয়ে অনুরণন জাগায়। তার লেখা বইয়ের মধ্যে ‘রঙিন বেলুন’, ‘সম্পাদকের জবানবন্দি’, ‘অমিয় গরল’, ‘আমার যত কথা’ এবং ‘স্বপ্ন বেঁচে থাক’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সাংবাদিকতায় অনন্য ভূমিকার জন্যে ২০১৪ সালে একুশে পদক, ২০১৬ সালে কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশের (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা এবং ২০১৭ সালে আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা লাভ করেন।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গোলাম সারওয়ারের এবারের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গোলাম সারওয়ার ফাউন্ডেশন’, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো অনুষ্ঠান ও স্মরণসভা হচ্ছে না। আজ দুপুর ১২টায় তার কবরে সমকাল পরিবার শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। এছাড়া পরিবারের উদ্যোগে রয়েছে স্মরণ ও দোয়ার আয়োজন।