বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন
ওয়েব ডেস্ক: দেশের জনগণ ৫ আগস্ট গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে ঢাকা-৫ সংসদীয় এলাকায় ছাত্র প্রতিনিধি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মাসুদ বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে; যেকোনো সময় সময় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সচল হতে পারে বলে প্রধান উপদেষ্টার যেই বক্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে ওই বক্তব্য পুরো জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।
তিনি বলেন, সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করলেও এ দেশের জনগণ ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগকে গণহত্যাকারী দল হিসেবে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। পৃথিবীর কোথাও গণহত্যাকারী দল জনগণের সামনে দ্বিতীয়বার ফিরে আসতে পারেনি। আওয়ামী লীগও ফিরে আসতে পারবে না। যারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবে জনগণ তাদেরকে প্রতিহত করবে। জনগণের বুকে গুলি চালানো গণহত্যাকারী দল রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে।
জামায়াতের এ নেতা বলেন, যেই আওয়ামী লীগ জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়ে দুই হাজারের অধিক শহীদ ও ৫০ হাজারে অধিক মানুষকে আহত-পঙ্গু করেছে, বিগত ১৫ বছর দেশের জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে, অসংখ্য মানুষকে খুন-গুম করেছে, মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগকে কোনোভাবেই রাজনৈতিক দল বলা যায় না। আওয়ামী লীগকে গণহত্যকারী দল বলতে হবে। মানুষ হত্যা করা, মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া রাজনৈতিক দলের কাজ নয়। রাজনৈতিক দলের কাজ হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর মতো দেশ ও জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপসহীন সংগ্রাম করা।
মাসুদ বলেন, আওয়ামী লীগের শোষণ থেকে মুক্তির পেতে জনগণ জুলাই বিপ্লব সংঘটিত করেছে। সেই বিপ্লব অর্জন করতে গিয়ে হাজারো ছাত্র-জনতা জীবন ও রক্ত দিয়েছে। ছাত্র-জনতার জীবন ও রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় বসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করলে জনগণ চুপ করে বসে থাকবে না।
জুলাই বিপ্লব নস্যাৎ করতে দেশি-বিদেশি নানারকম ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি উপস্থিত ছাত্র প্রতিনিধিদের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে আহ্বান জানান।
সমাবেশের প্রধান বক্তা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী চব্বিশের জুলাই আন্দোলন পর্যন্ত স্বাধীনতার ৫৪ বছর স্বাধীন দেশের নাগরিকদের অধিকার আদায়ের জন্য বারবার রক্ত দিতে হয়েছে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার নেতৃত্ব জাতি পায়নি। স্বাধীনতার চেতনা ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ন্যায় বিচার’ পাল্টে দিয়ে শেখ মুজিব রক্ষী বাহিনী গঠন করে ক্ষমতার লোভে মানুষ হত্যা করেছে। তার দুর্নীতি-লুটপাটের কারণে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে তার কন্যা খুনি হাসিনা বিগত ১৫ বছর সারা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। আধিপাত্যবাদের দোসর ফ্যাসিস্ট হাসিনা এ দেশের হাজার হাজার ছাত্র, শিক্ষক, ইমাম, আলেম-ওলামাকে হত্যা করেছে। হাসিনার অপশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের নেতৃত্বে জাতি রাজপথে নেমে আসে। ৩৬ জুলাই আন্দোলনের মুখে হাসিনার পতন হয়।
ছাত্র উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা কোন যোগ্যতা বলে উপদেষ্টা হয়েছে যারা উপদেষ্টা হয়ে জুলাই যোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে পারেনি। তারা উপদেষ্টা পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছে। উপদেষ্টা পদে বসে বিলাসী জীবনযাপনের জন্য বিপ্লব হয়নি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি, ঢাকা-৫ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, গণহত্যা চালিয়ে পালিয়ে যাওয়া দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত থাকার কারণে যেকোনো সময় তাদের কার্যক্রম সচল হতে পারে ঘোষণা দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রমাণ করেছে তারা বিপ্লবের চেতনা ধারণ করছে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার এমন ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, অনতিবিলম্বে আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন পরিচালক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী স্থানীয় এক কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক গোলাম মর্তুজা, ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হেলাল উদ্দিন রুবেল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নবনির্বাচিত জিএস মাজহারুল ইসলাম।