জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশি হিদে সুগা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ-জাপান মৈত্রী প্রতিষ্ঠার প্রথম রূপকার। বাংলাদেশ থেকে জাপানে বঙ্গবন্ধুর সফরের সময় বাংলাদেশ-জাপান আর্থিক সহযোগিতার দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
বুধবার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ১০ দিনব্যাপি অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিনের আয়োজন ‘ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জোতির্ময়’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ধারণকৃত ভিডিওতে শুভেচ্ছা বার্তা পড়ে শোনান জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশি হিদে সুগা।
বঙ্গবন্ধুর জাপান সফরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ইউশি হিদে সুগা বলেন, জাপান সফরের সময় শেখ মুজিবুর রহমান স্বভাবগতভাবেই ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন- তিনি জাপানের মডেলে তার বাংলাদেশকে গড়ে তুলবেন। তাকে স্বাগত জানিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর অফিসে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মি. তানাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ‘তিনি যেন আমাদের হিরোভূমি ইতো।’ ইতো ছিলেন জাপানের প্রধান জাতীয় নেতা।
ভিডিও বার্তায় ইউশি হিদে সুগা জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ৫০ বছর আগে বিশ্বের অল্প যে কয়টি দেশ প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, জাপান তাদের মধ্যে অন্যতম।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেও বাঙালিদের সঙ্গে জাপানিজদের সম্পর্ক শতাব্দী প্রাচীন। জাপানকে ঐতিহাসিকভাবে বাঙালিরা বন্ধুরাষ্ট্র মনে করে।
এর আগে বিকেল ৪টায় রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে শিশুশিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর মুজিব শতবর্ষের থিম সং উপস্থাপনা করা হয়। এটি লিখেছেন কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও সুর করেছেন নকিব খান।
পরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আকর্ষণীয় ফ্লাইফাস্টের রেকর্ড ভিডিও উপস্থাপন করা হয়। দেশের শিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান আর মনোজ্ঞ উপস্থাপনা মুগ্ধ করে আমন্ত্রিত অতিথিদের।
বাঙালির ইতিহাসের অনন্য এ উদযাপনের মুহূর্তে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ্। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ফাজনা আহমেদ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি আমন্ত্রিত অতিথি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানান চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জান্টিন ট্রুডো, জাপানের জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইউশিহিদে সুগা ও বিখ্যাত সাংবাদিক মার্ক টালি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সঞ্চালনা করেন সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্ব সাজানো হয়েছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ১০ দিনব্যাপি এ অনুষ্ঠানমালার প্রথমদিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। আমন্ত্রিত অতিথিরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।