ওয়েব ডেস্ক: ‘ক্ষতির কথা আর জিজ্ঞেস করবেন না বাবা, যা ছিল সবই তো শেষ, কিছুই নেই। ছোট একটা ঘর ছিল, বাঁশের খুঁটি দিয়ে কোনোরকম টিন দিয়ে থাকতাম। এখন সেখানে কোমরসমান পানি। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে দেখতে গেছিলাম। ঘরের অবস্থা খুবই নড়বড়ে। যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। ঘরের ভেতরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে পা দেবে যায়। বন্যা শেষে উঠব কোথায় গিয়ে, এ নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।’
বুধবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে বন্যাদুর্গত কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশীমুল এলাকায় আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন ওই এলাকার বানভাসি বিধবা নূরজাহান বেগম।
পানিবন্দি নূরজাহান বেগম আশ্রয় নিয়েছেন বুড়িচং উপজেলার ফকিরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে। তিনি বলেন, জীবনেও এত পানি দেখিনি। আমার কোনো ছেলে নেই। দুইটা মেয়ে, ওদের বিয়ে দিয়েছি। একা মানুষ পড়ে থাকতাম ঘরটায়। চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে কত গেছি, একটা ঘর করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কারও দয়া হয়নি। এখন ভাঙা ঘরটি বন্যায় তলিয়ে গেছে। গরিবের কষ্টের শেষ আছে বাবা?
ওই এলাকার বানভাসি আফরোজা বেগম বলেন, ঘরবাড়ি সব পানির নিচে। শুকনো খাবার পাই, দিয়ে যায় মানুষ এসে। কিন্তু রান্না করা খাবার খাওয়া হয় না আজ কয়েকদিন। তবুও বেঁচে আছি, এটাই আলহামদুলিল্লাহ।
আব্দুল গফুর নামের পঞ্চাশোর্ধ এক বৃদ্ধ বানভাসি বলেন, এই বছর এত পানি কোথা থেকে এলো? ২০০৪ সালে আমাদের এদিকের বন্যা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। তখন আমাদের ঘরের দরজা পর্যন্ত পানি উঠেছিল। কিন্তু ঘরের ভেতর পানি ঢোকেনি। কিন্তু এবার কোমরসমান পানি ঘরের ভেতর। সব ভেসে গেছে। মানুষজন ঘরে থাকতে পারছে না। এবার কেন এত পানি হলো?
প্রসঙ্গত, স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সঙ্গে লড়াই করছে কুমিল্লার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ। ভারতের ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে ভেঙে পড়ে গোমতী নদীর বাঁধ। নিম্নাঞ্চলের লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত করে কয়েকশ গ্রাম। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলায় হানা দিয়েছে ভয়াবহ এই বন্যা। বাস্তুচ্যুত হয়ে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। ভয়াবহ এই বন্যার ফলে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, গরুর খামার, খামারসহ হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। বন্যার পর দৃশ্যমান হবে মানুষের ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ চিহ্ন। সেসব ক্ষতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় এখন বানভাসি মানুষেরা।