ওয়েব ডেস্ক: বস্তি সংলগ্ন এলাকার চেয়ে বস্তিতে বসবাস করা বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) হেলথ ওয়াচ বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) এর গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় অ্যাডভোকেসি সহায়তায় ছিল হেলথ ওয়াচ বাংলাদেশ।
২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা এবং চট্টগ্রামের বস্তি ও বস্তিসংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন এমন মানুষদের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়েছিল। এর মধ্যে ঢাকার ৪টি (কড়াইল, মিরপুর, ধলপুর ও এরশাদ নগর) ও চট্টগ্রামের দুটি (শহীদ লেন এবং আকবর শাহ কাটা পাহাড়) বস্তি জিরিপের জন্য বেচে নেওয়া হয়েছিল। ঠিক একই সময়ে দুই শহরে বস্তি ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় চালানাে হয়েছিল জরিপ। দৈবচয়নের ভিত্তিতে জরিপের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। অর্থাৎ বাড়ি বাছাই কিংবা মানুষ বাছাই সব ক্ষেত্রে এই দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে যেসব ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তাদের বয়স ১০ বছর কিংবা তার বেশি।
এই জরিপ চালানাের জন্য একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছিল। জরিপে অংগ্রহণকারী ব্যক্তি গত ছয়মাসে করােনার সংক্রমণ এড়াতে কোনাে প্রতিরােধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল কিনা, ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান (বয়স, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্মসহ অন্যান্য), ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদী কোনাে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে কিনা, কোভিড-১৯ এর কোনাে উপসর্গ দেখা দিয়েছিল কিনা, বাসায় কেউ করােনায় আক্রান্ত হয়েছিল কিনা, শরীর চর্চা বা কায়িক পরিশ্রম করেন কিনা এবং বিসিজি টিকা নেওয়া হয়েছিল কিনা।
এছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তির উচ্চতা, ওজন এবং রক্তচাপ পরিমাপ করা হয়েছিল ও তাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। কোভিড-১৯ ভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি), হিউম্যান করােনা ভাইরাস (এইচকভ-এইচকেইউ-১), ইনফ্লুয়েঞ্জ ভাইরাস বি, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, ডেঙ্গু ভাইরাস, চিকনগুনিয়া ভাইরাসের এন্টিবডি এই ব্যক্তিদের শরীরে ছিল কিনা তাও পরীক্ষা করা হয়েছিল। এছাড়া রক্তে ভিটামিন ডি ও জিংকের মাত্রাও পরীক্ষা করা হয়েছিল।
গবেষণার ফলাফল
১. সামগ্রিকভাবে বস্তি সংলগ্ন এলাকার (৬২.২%) তুলনায় বস্তিতে বেশি সংখ্যক মানুষের (৭১.০%) শরীরে কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। আবার চট্টগ্রামের (৫৪.২%) তুলনায় ঢাকার (৭২.৯%) বেশি সংখ্যক মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছিল।
৩. নিম্ন আয়ের মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি ছিল
২. জরিপে যারা অংশ নিয়েছে তাদের ৩৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে চলমান অথবা পূর্ববর্তী ৬ মাসের মধ্যে করােনার মতাে উপসর্গ ছিল। এদের মধ্যে জ্বর, শুষ্ক কাশি, গলা ব্যথা অথবা একই সঙ্গে করোনার তিনটি উপসর্গই উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে উপসর্গহীন মানুষের তুলনায় কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি ছিল।
৪. শারীরিক গঠনের তুলনায় ওজন বেশি এমন মানুষের শরীরে বেশি অ্যান্টিবডির উপস্থিত ছিলো।
৫. যারা নিয়মিত হাত ধুয়ে থাকেন, মুখে কিংবা নাকে হাত দেন না, বিসিজি টিকা নিয়েছেন এবং মধ্যমানের কায়িক পরিশ্রম করেন এমন ব্যক্তিদের সার্স কভ-২-তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম ছিল।
৬. যারা এর আগে রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) অথবা হিউম্যান করােনাভাইরাস (এইচকভ-এইচকেইউ-১) আক্রান্ত হয়েছেন, তারা কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কম ঝুঁকিতে ছিল।
অন্যদিকে যারা ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন তারা কোভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে ছিল।
৭. যারা করােনায় আক্রান্ত হননি, তাদের তুলনায় যারা এতে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের রক্তে জিংকের
মাত্রা যথাযথ পরিমাণে ছিল।
৮. জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের শরীরে ভিটামিন ডি- এর অভাব উল্লেখযােগ্য হারে লক্ষ করা গেছে। তবে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি অ্যান্টিবডির ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলেনি। অর্থাৎ, অ্যান্টিবডি রয়েছে এমন মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি বেশি বা কম এমনটা লক্ষ করা যায়নি।
সুপারিশ
১। সংক্রমণের মাত্রা বুঝতে অ্যান্টিবডি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
২। মহামারি সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে।
৩। বস্তিবাসী কারাে মধ্যে করােনার উপসর্গ দেখা দিল কিনা তা জানার জন্য পদক্ষেপ বাড়াতে হবে।
৪. করােনার উপসর্গ নিয়ে পক্ষপাতমূলক তথ্য সরবাহ বন্ধ করতে হবে।
৫। বিভিন্ন জনগােষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৬। দেশে গ্রাম ও শহর অঞ্চল লক্ষ্য করে আরও জরিপ, কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।