নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে সৌদি আরব সরকার সীমিত আকারে ওমরাহ হজ চালু করলেও বাংলাদেশকে এখনও সুযোগ দেওয়া হয়নি জানিয়ে এ নিয়ে প্রতারণার বিষয়ে সতর্ক করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। যারা ফেসবুকে ওমরাহর দিনক্ষণ জানিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ‘সৌদি সরকার থেকে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো চিঠি পাওয়া না গেলেও কতিপয় ব্যক্তি ও এজেন্সি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ উল্লেখ করে ওমরাহ পালনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। এতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ সৌদি আরবের অনুমতি পাওয়া সাপেক্ষে মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি না করা পর্যন্ত এ ধরনের প্রচারণা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ওমরাহ পালনেচ্ছুদের কারও সঙ্গে আর্থিক লেনদেন না করতে অনুরোধ করা হয়।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকার পর ওমরাহ যাত্রীদের জন্য রোববার থেকে সীমিত পরিসরে ওমরা হজ শুরু হয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গত মার্চে ওমরাহ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব সরকার। মহামারির কারণে এবার মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ হজও সীমিত আকারে পালিত হয়েছে। সৌদি সরকার জানিয়েছে, তিনটি ধাপে ওমরাহ কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। প্রথম ধাপে শুধু সৌদি আরবের অবস্থানরতরাই সুযোগ পাচ্ছেন। ওমরাহর অ্যাপের মাধ্যমে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়েছে তাদের। এমনিতে আগে দৈনিক ২০ হাজার জনকে ওমরাহ করার অনুমতি দেওয়া হলেও এখন এর ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ এক দিনে ছয় হাজার জনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ওমরাহ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
দ্বিতীয় ধাপে ১৮ অক্টোবর থেকে তা বাড়িয়ে একদিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার জনকে ওমরাহর জন্য মসজিদুল হারামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। তৃতীয় ধাপে ১ নভেম্বর থেকে সৌদি আরবে অবস্থান করা এবং বিদেশ থেকে আসা ওমরাহ যাত্রীদের মক্কার মসজিদুল হারামে ঢুকতে দেওয়া হবে। তখন প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষ ওমরাহ করার সুযোগ পাবেন।
এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে হজ ও ওমরাহ এজেন্সির লাইসেন্সের জামানতের ৫০ শতাংশ অর্থ আগামী এক বছরের জন্য ফেরতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার হজ ও ওমরাহ এজেন্সিগুলোকে চিঠি দিয়ে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা দেওয়া সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এবং হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এজেন্সিগুলোকে হজ ও ওমরাহ লাইসেন্সের জামানতের ৫০ শতাংশ টাকা ‘কর্জে হাসানা’ (ফেরতযোগ্য) হিসেবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আগ্রহী হজ ও ওমরাহ এজেন্সিকে এ সংক্রান্ত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের রক্ষিত ও লিয়েন করা জামানতের ২০ লাখ টাকার ৫০ শতাংশ বা ১০ লাখ টাকা আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই ফেরত দিয়ে সমন্বয় করতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়, জামানতের ৫০ শতাংশ (ফেরতযোগ্য) অর্থ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর) যুগ্ম সচিব (হজ) বরাবর ফেরত দেওয়ায় ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হবে। যেসব হজ ও ওমরাহ এজেন্সি অদ্যাবধি জামানতের অবশিষ্ট ১০ লাখ টাকা দেয়নি বা যেসব এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল/স্থগিত বা জামানত বাজেয়াপ্তসহ বিভিন্ন প্রকার শাস্তি বিদ্যমান রয়েছে বা ধার্য করা জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেনি বা আদালতে রিট/মামলা চলমান সেসব এজেন্সির আবেদন বিবেচনা করা হবে না। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের ছকে আগ্রহী হজ ও ওমরাহ এজেন্সিকে আবেদন করতে হবে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।