1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. chakroborttyanup3@gmail.com : অনুপ কুমার চক্রবর্তী : অনুপ কুমার চক্রবর্তী
  4. Azharislam729@gmail.com : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
  5. bobinrahman37@gmail.com : Bobin Rahman : Bobin Rahman
  6. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  7. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  8. harun.cht@gmail.com : চৌধুরী হারুনুর রশীদ : চৌধুরী হারুনুর রশীদ
  9. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  10. msharifhossain3487@gmail.com : Md Sharif Hossain : Md Sharif Hossain
  11. humiraproma8@gmail.com : হুমায়রা প্রমা : হুমায়রা প্রমা
  12. dailyprottoy@gmail.com : প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  13. namou9374@gmail.com : ইকবাল হাসান : ইকবাল হাসান
  14. mohammedrizwanulislam@gmail.com : Mohammed Rizwanul Islam : Mohammed Rizwanul Islam
  15. hasanuzzamankoushik@yahoo.com : হাসানুজ্জামান কৌশিক : এ. কে. এম. হাসানুজ্জামান কৌশিক
  16. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  17. niloyrahman482@gmail.com : Rahman Rafiur : Rafiur Rahman
  18. Sabirareza@gmail.com : সাবিরা রেজা নুপুর : সাবিরা রেজা নুপুর
  19. prottoybiswas5@gmail.com : Prottoy Biswas : Prottoy Biswas
  20. rajeebs495@gmail.com : Sarkar Rajeeb : সরকার রাজীব
  21. sadik.h.emon@gmail.com : সাদিক হাসান ইমন : সাদিক হাসান ইমন
  22. safuzahid@gmail.com : Safwan Zahid : Safwan Zahid
  23. mhsamadeee@gmail.com : M.H. Samad : M.H. Samad
  24. Shazedulhossain15@gmail.com : মোহাম্মদ সাজেদুল হোছাইন টিটু : মোহাম্মদ সাজেদুল হোছাইন টিটু
  25. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  26. showdip4@gmail.com : মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ : মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
  27. shrabonhossain251@gmail.com : Sholaman Hossain : Sholaman Hossain
  28. tanimshikder1@gmail.com : Tanim Shikder : Tanim Shikder
  29. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :
  30. Fokhrulpress@gmail.com : ফকরুল ইসলাম : ফকরুল ইসলাম
  31. uttamkumarray101@gmail.com : Uttam Kumar Ray : Uttam Kumar Ray
  32. msk.zahir16062012@gmail.com : প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক : প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক
বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ - দৈনিক প্রত্যয়

বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৬১ Time View

ওয়েব ডেস্ক: ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ভাঙ্গা চৌরাস্তা থেকে টেকেরহাট হয়ে সামনে এগোলেই গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল গ্রাম। নিভৃত এই পল্লীর মাঝে গড়ে তোলা হয়েছে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র, যেখানে এক রাত থাকতে গেলে গুনতে হয় অন্তত ১৫ হাজার টাকা।

রিসোর্টের ভেতরে ঘুরে দেখা গেছে একই সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর হাতে গড়া আভিজাত্যের অপরূপ মিশেল। বিশাল আকৃতির ১৫টি পুকুরের চারপাশে গার্ড ওয়াল, দৃষ্টিনন্দন ঘাট, পানির কৃত্রিম ঝরনা ও আলোর ঝলকানি।

পার ঘেঁষে রয়েছে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স কটেজ। বিদেশি শিল্পীদের নিপুণ হাতে তৈরি হয় এসব স্থাপত্য নকশা।

কটেজের ভেতর থেকে পুকুর পর্যন্ত এমন পথ নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে মাটিতে পা ফেলার প্রয়োজন নেই; সরাসরি কটেজ থেকে কাচে ঘেরা আবরণ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় শানবাঁধানো ঘাটে।

সাভানা ইকো রিসোর্টের পরিধি এতটাই বড় যে সাহাপুর গ্রামের নাম লিখে গুগলে সার্চ দিলে এই রিসোর্টটিই আগে ভেসে ওঠে পর্দায়।

প্রায় এক হাজার ৪০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই ইকো রিসোর্টের বিভিন্ন জায়গায় মাটি ভরাট করে বানানো হয়েছে কৃত্রিম পাহাড়। সাগরের কৃত্রিম ঢেউ খেলানো সুইমিং পুলও রয়েছে এখানে। আছে হাজারের বেশি ভিয়েতনামি নারকেলগাছসহ বিভিন্ন ফলফলাদির গাছ। রয়েছে উন্নতমানের সাউন্ড সিস্টেমসহ বিশাল আকৃতির কনসার্ট হল।

দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একক পরিবারের জন্য বানানো এসব কটেজের পেছনে ব্যয় হয়েছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি। যুগলদের কাছে কটেজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় রিসোর্টের ভেতরে এখন আরো ৫০টি কটেজ নির্মাণ করা হয়েছে। এত সব আয়োজন যেখানে, সেই রিসোর্টের নিরাপত্তায় পাশেই বসানো হয়েছে ‘বিশেষ’ পুলিশ ফাঁড়ি। যাতায়াতের জন্য সরকারি খরচে বানানো হয়েছে সাত কিলোমিটারের বেশি পাকা সড়ক।

দেশে এ রকম নজিরবিহীন আভিজাত্যে ঘেরা পর্যটন স্পটটির মালিকপক্ষ কারা জানেন? অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে রাষ্ট্রীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারপ্রাপ্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের পরিবার।

সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বেনজীরের বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর এবং পরিচালক ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর।

শুধু এই এক ইকো রিসোর্টই নয়, পুলিশের সাবেক এই প্রভাবশালী শীর্ষ কর্মকর্তা তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁদের নামে অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে। এর পাঁচটিই নিজ জেলা গোপালগঞ্জে।

জেলা সদরের সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগীটোল এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে রয়েছে বেনজীর আহমেদের অঢেল সম্পদ। দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছেই দামি এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরো ১০ বিঘা জমি।

এই বিপুল সম্পদের মালিক পরিবারের কর্তা পুলিশের সাবেক আইজি ও র‌্যাবের সাবেক ডিজি বেনজীর আহমেদ সরকারি বেতন-ভাতা থেকে কত টাকা উপার্জন করেছেন, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদ বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় করেছেন এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকা। এর বাইরে পদবি অনুযায়ী পেয়েছেন আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। বাংলাদেশ পুলিশের ৩০তম মহাপরিদর্শক ছিলেন তিনি। ২০১১, ২০১২, ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম)। অবসরে যাওয়ার আগে ২০২১ সালে ভূষিত হন শুদ্ধাচার পুরস্কারেও। ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়ার পর বেরিয়ে আসে সাবেক এই পুলিশকর্তার থলের বিড়াল।

সম্পদের মালিকানায় স্ত্রী ও দুই মেয়ে

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সুকৌশলী বেনজীর আহমেদ নিজের নামে কোনো সম্পদ করেননি, করেছেন তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে। গোপালগঞ্জে সাভানা ফার্ম প্রডাক্টস, সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেড, সাভানা ন্যাচারাল পার্ক, সাভানা ইকো রিসোর্ট, সাভানা কান্ট্রি ক্লাব বানিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড নামের একটি কম্পানিতে বড় মেয়ে ফারহিনের নামে এক লাখ, আর ছেটে মেয়ে তাহসিনের জন্য কেনা হয়েছে আরো এক লাখ শেয়ার। এম/এস একটি শিশির বিন্দু (রেজি. পি-৪৩০৩৬) নামের ফার্মের ৫ শতাংশের মালিকানায় নাম রয়েছে বড় মেয়ের। আরো ৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে ছোট মেয়ের। একই প্রতিষ্ঠানে বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার রয়েছে ১৫ শতাংশ অংশীদারি। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটিতে মোট ২৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও মেয়েদের।

যৌথ মূলধনী ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে একটি নথি হাতে এসেছে। সেটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সাবেক পুলিশ ও র‌্যাব কর্তা বেনজীর আহমেদ তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করেছেন সাভানা অ্যাগ্রো। ২০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনধারী সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক তিনজন। ১০টি শেয়ারধারী স্ত্রী জীশান মীর্জা চেয়ারম্যান, সমপরিমাণ শেয়ারের অধিকারী ২৯ বছর বয়সী বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর এমডি। আর মাত্র ২৪ বছর বয়সী ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর আছেন পরিচালক হিসেবে। প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ২০ কোটি নয়, সাভানা অ্যাগ্রোর রয়েছে কয়েক শ কোটি টাকার বিনিয়োগ ও ব্যবসা।

বেনজীর আহমেদের পরিবারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো সাভানা ন্যাচারাল পার্ক প্রাইভেট লিমিটেড। রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কম্পানির (আরজেএসসি) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকা। সাভানা অ্যাগ্রোর মতো এই কম্পানির মালিকানায়ও আছেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে। যথারীতি এখানেও স্ত্রী চেয়ারম্যান এবং মেয়েদের একজন এমডি, অন্যজন পরিচালক। প্রত্যেকের হাতে রয়েছে এক লাখ করে মোট তিন লাখ শেয়ার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এই পার্কের আয়তন প্রায় ৬০০ বিঘা। পার্কটি বড় করতে পাশে আরো ৮০০ বিঘা জমি কেনা হয়েছে। এখন ভরাট করা হচ্ছে।

যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে পাওয়া নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাভানা অ্যাগ্রোর নিবন্ধনে ঠিকানা হিসেবে দেওয়া হয়েছে ২২৮/৩, শেখপাড়া রোড, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঠিকানাটি বেনজীরের শ্বশুরবাড়ি। বেনজীরের শ্বশুরের নাম মীর্জা মনসুর উল হক ও শাশুড়ির নাম লুত্ফুন নেসা মনসুর।

নথির তথ্য মতে, বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার জন্ম ১৯৭৩ সালের ১০ জুলাই। বড় মেয়ের জন্ম ১৯৯৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। ছোট মেয়ে জন্মেছেন ২০০০ সালের ১২ এপ্রিল। দুই মেয়ে মাত্র ২৯ ও ২৪ বছর বয়সেই কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে গেছেন প্রভাবশালী পুলিশকর্তা বাবার অবৈধ আয়ের ওপর ভর করে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। স্ত্রী জীশান মীর্জারও তেমন কোনো বৈধ আয়ের উৎস না থাকা সত্ত্বেও বিপুল বিনিয়োগে গড়ে তোলা ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান তিনি। জীশান মীর্জার পৈতৃক সূত্রে এত পরিমাণ সম্পদ পাওয়ার সুযোগ নেই। একইভাবে বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীরের ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বিয়ে হলেও ছোট মেয়ের এখনো বিয়েই হয়নি। বড় মেয়ের বিয়ের প্রায় ১২ বছর আগে থেকেই বেনজীর কোম্পানিগুলোর জন্য জমি কেনা শুরু করেন এবং মেয়েকে কম্পানির এমডি বানান।

সরেজমিনে বেনজীরের রিসোর্ট

বেনজীরের সম্পদের খোঁজে সরেজমিন অনুসন্ধানে গোপালগঞ্জে যায় অনুসন্ধানী দল। বৈরাগীটোল এলাকায় সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কটিকে স্থানীয়রা ‘বেনজীরের চক’ নামে চেনে। পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের ডিজি থাকাকালে এলাকাটিতে স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে প্রায় এক হাজার ৪০০ বিঘা জমি কেনেন তিনি। এসব জমির বিঘাপ্রতি ক্রয়মূল্য ছিল তিন থেকে আট লাখ টাকা।

এলাকাবাসী জানায়, বেনজীর জমিগুলো কেনার পর অন্ততপক্ষে ১৫ ফুট ভরাট করে রিসোর্ট বানিয়েছেন। কারণ এগুলো ছিল বদ্ধ জলাশয়। নিচু হওয়ায় বেনজীরের রিসোর্টটি আগে ছিল মাছের অভয়ারণ্য।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাভানা রিসোর্টে ১৫টি কটেজ বানানো শেষ করে পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এগুলো কাপলদের কাছে শুধু দিন হিসাবে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা, রাত হিসাবে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত একই দামে, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হয়। রিসোর্টে চাকরিরত দায়িত্বশীলরা জানান, যেকোনো বয়সী ছেলেমেয়ে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই এসব কটেজে থাকতে পারে। চাইলে রাত যাপন করতে পারে। বেনজীর বিলাসবহুল এই রিসোর্ট চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন থাইল্যান্ডসহ পশ্চিমা বিশ্বের আদলে।

রিসোর্টটির আলোকসজ্জা করতে কোনো মিটার ছাড়াই কিলোমিটারের পর কিলোমিটার বিদ্যুতের সরকারি তার সরবরাহ করা হয়েছে কোনো খুঁটি ছাড়াই। মাটির ওপর দিয়ে নেওয়া এসব বৈদ্যুতিক তার যে কারো জন্যই প্রাণনাশের হুমকিস্বরূপ। সাগরের কৃত্রিম ঢেউ খেলানো সুইমিং পুলও রয়েছে এখানে। আছে হাজারের বেশি ভিয়েতনামি নারকেলগাছসহ বিভিন্ন ফলফলাদির গাছ।

শুধু তাই নয়, রিসোর্টটির নিরাপত্তায় পাশেই বসানো হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থায় উন্নতি না হলেও এই রিসোর্টে প্রবেশ স্বাচ্ছন্দ্য করতে সাত কিলোমিটার সড়ক পাকা করা হয়েছে সরকারি খরচে। রিসোর্টের ভেতরেও সর্বত্র করা হয়েছে ঢালাইয়ের রাস্তা। রিসোর্টের সব রাস্তার হিসাব করলে দেখা যায়, প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক পিচ ঢালাই করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, বেনজীরের নিজ প্রতিষ্ঠানের এসব রাস্তাও করা হয়েছে সরকারি খরচে।

জানতে চাইলে রিসোর্টের ব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান অনুসন্ধানী টিমকে বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ এটিকে সাজাচ্ছেন দেশের সবচেয়ে বড় ইকোপার্ক ও বিলাসবহুল রিসোর্টের পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে। এ জন্য যা যা দরকার, তা-ই করা হচ্ছে। ’

বেনজীরের কেনা জমির কয়েকজন মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ক্রমাগত চাপ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেন বেনজীর। ভয়ভীতিতে কাজ না হলে ভেকু দিয়ে জমির মাটি নিয়ে যেতেন। গভীর গর্ত করে শেষ পর্যন্ত জমি বিক্রি করতে বাধ্য করতেন। পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন পদে থাকায় তার অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি জমির মালিকরা।

ঢাকা ও পূর্বাচলে বিপুল টাকার সম্পদ

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর গুলশানে সুবিশাল অভিজাত একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে বেনজীর আহমেদের। গুলশান ১ নম্বরের ১৩০ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িটির নাম ‘র‌্যাংকন আইকন টাওয়ার লেক ভিউ’। ভবনের ১২ ও ১৩তম তলায় আট হাজার ৬০০ বর্গফুটের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তাঁর। সূত্র জানায়, আট হাজার ৬০০ বর্গফুটের এই অ্যাপার্টমেন্টের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।

ভবনটি নির্মাণ করে র‌্যাংকন ডেভেলপমেন্টস। প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯.৭৫ কাঠা জমিতে ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের আয়তন দুই হাজার ১৫০ বর্গফুট। এখানে রয়েছে ১৩টি ফ্লোর এবং দুটি বেইসমেন্ট। সত্যতা নিশ্চিত করতে সরেজমিনে গেলে ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মো. সবুজ জানান, ১২ ও ১৩তম তলায় রয়েছে বেনজীরের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।

এ ছাড়া রাজধানীর মগবাজার আদ-দ্বীন হাসপাতাল সংলগ্ন ইস্টার্ন প্রপ্রার্টিজের একটি বহুতল ভবনে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন বেনজীর আহমেদ।

পূর্বাচলে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি করেছেন বেনজীর আহমেদ। আনন্দ হাউজিং সোসাইটির দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় পোড়া মোড়ের পাশের এলাকায় অন্তত ৪০ কাঠা জমির ওপর গড়েছেন বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি। জমি ও বাড়ির মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা বলে ধারণা স্থানীয়দের।

ওই এলাকার বাসিন্দা মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এই এলাকা ডোবা ও বিল হিসেবে আমরা দেখেছি। কিছুদিন আগেও এসব এলাকায় আমরা মাছ ধরেছি। পুলিশের কর্মকর্তারা আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরপরই বেনজীর আহমেদ এই জায়গায় মাটি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ’

দীর্ঘদিন ধরেই আনন্দ হাউজিং সংলগ্ন এলাকায় অটো চালান মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, সোসাইটির ভেতরে সবচেয়ে দামি বাড়ি এটি। আনন্দ হাউজিং এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে বেনজীরের ডুপ্লেক্স বাড়িটি দেখার জন্য মাঝেমধ্যে ভিড় জমায় সাধারণ মানুষ।

রাজধানীর পূর্বাচলের ফারুক মার্কেটের পেছনের দিকে ১৭ নম্বর সেক্টরের ৩০১ নম্বর রোডের জি ব্লকে ১০ নম্বর প্লটের মালিক পুলিশের সাবেক এই আইজি। স্থানীয়রা বলছেন, ১০ কাঠা পরিমাণের এই প্লটের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২২ কোটি টাকা। বেনজীর আহমেদ পুলিশের আইজি থাকাকালে এই প্লট কেনেন। তবে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, পুলিশের এই সাবেক আইজি তার ১০ কাঠার প্লটটি বিক্রির পরিকল্পনা করছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু ক্রেতার সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। ওই এলাকার মোহাম্মদ নাঈম, আব্দুল কাদের ও মোহাম্মদ মোহসিন নামের তিন ব্যক্তি পুলিশের সাবেক এই আইজির ১০ কাঠার প্লটটির বিষয়ে আলাপকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নাওড়ায় বেনজীর আহমেদের রয়েছে দুই বিঘা জমি, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।

বেনজীরের দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আইন সবার জন্য সমান। কেউ যদি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন, দুদক তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। ’

বেনজীর আহমেদ পুলিশের একজন প্রভাবশালী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন, এ ক্ষেত্রে দুদক কতটুকু কী করতে পারবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আইনে প্রভাবশালী নিয়ে কিছু বলা নেই। সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীরও দুর্নীতির বিচার হয়েছে। সুতরাং যে কারো দুর্নীতির বিষয়ে দুদক চাইলে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিতে পারে।

জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক বলেন, ‘বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই অনুসন্ধান করা হবে। তবে এখানে বলে রাখা ভালো, কারো বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে পর্যাপ্ত ‘সাপোর্টিং পেপারস’ আমাদের কাছে থাকতে হয়। ’

তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট ও সঠিক তথ্য পেলে দুদক বেনজীর কেন, যে কারো বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান করবে। আর সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পরও যদি অনুসন্ধান না করা হয়, তাহলে দুদকের বিরুদ্ধেই তো রিপোর্ট হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে পরিচয় দিয়ে খুদে বার্তা পাঠিয়ে নিউজের বিষয়ে বক্তব্য প্রয়োজন বলে জানানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..