সুমন,মোংলা(বাগেরহাট)সংবাদদাতা: জীবনের অর্ধেকেরও বেশি সময় কেটেছে ভাসমান অবস্থায়, ছিল না কোনও স্থায়ী ঠিকানা। আবার কারও কারও ঠিকানার অভাবে নিজ দেশেই ছিল নাগরিকত্বের পরিচয়ও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহারের আধাপাকা ঘরসহ জমির মালিক হয়ে সবই পেয়েছেন তারা। সেখানেই নতুন করে জীবনের স্বপ্ন বুনছেন একসময়ের গৃহহীন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে পেয়েছেন ঘর। জীবন সায়াহ্নে এসে আবার নতুন করে সংসারে মেতেছেন অনেক দম্পতি। নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন সুন্দর জীবনের।কৃতজ্ঞতা জানান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
উপহারের ঘর পাওয়া নিম্নআয়ের সবারই স্বপ্ন ও জীবনযাপনে পরিবর্তন এসেছে। হাঠৎ এমন পরিবর্তনে একদিনে যেমন উচ্ছ্বসিত তারা। অন্যদিকে নতুন করে বাঁচার তাগিদ তাদের মনে। শুধু নিজের ঘর নয়, পুরো প্রকল্প এলাকাই সাজছে তাদের যত্ন ও আবেগে। কেউ কেউতো ঘর বুঝে পাওয়ার আগেই চলে এসেছেন নির্মাণাধীন ঘরের তদারকিতে।
সারাদিন কায়িক পরিশ্রম শেষে ফিরতে হতো অন্যের ঘরে। এখন প্রতিদিন ফিরতে পারেন নিজ ঘরে। শুধু ঘরই নয়, আছে নিজ নিজ নামে দুই শতক জমি, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, সুন্দর বারান্দাসহ বসবাসের নিরাপদ সুবিধা।
চতুর্থ পর্যায়ে মোংলা উপজেলার চাঁদপাই, সোনাইলতলা ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাই হয়েছে ভূমিহীন ও গৃহহীন ১২০ টি পরিবারের। এসব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের কাছে প্রত্যেকটি ঘর যেন স্বপ্নের ঠিকানা। আশ্রয়ন প্রকল্পে উপকার ভুগীরা নিজেদের ঘরের পাশে সবজি উৎপাদন ও ফল গাছ লাগিনাসহ নদীতে মৎস্য আহরণ, হাঁস মুরগি পালনসহ ক্ষেত খামারে কাজ করে নিশ্চিন্তে উপার্জন করে দিন যাপন করবেন তারা। এছাড়া গরু, ছাগল পালন ও ক্ষুদ্র ব্যবসা করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার প্রতিটি ঘর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে টাকা। ৪৩৫ বর্গফুটের প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি শয়নকক্ষ, একটি করে বারান্দা, রান্নাঘর, বাথরুম ও নামাজের জায়গাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে।
এছাড়া প্রথম পর্যায়ে ৫০টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১২৫টি, তৃতীয় পর্যায়ে ২০০টি ঘর গৃহহীনদের মাঝে দেয়াসহ চতুর্থ পর্যায়ের প্রথম ধাপে ৫০টি পরিবারকে জমিসহ গৃহ প্রদান কার্যক্রম উদ্ভোধন করা হয়। প্রতিটি ঘরে বাসগৃহ মানসম্মত নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, নির্ধারিত ডিজাইন অনুযায়ী ৫টি জানালা ও ৩টি দরজা রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি ঘরের জন্য দুই শতক জমি এবং ঘরের সামনে ২২ ফুট চওড়া রাস্তা ও পাশে ১৮ ফুট চওড়া রাস্তা রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগসহ ৩০০০ হাজার লিটার পানির ট্যাঙ্কির ব্যবস্থা করা হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ের প্রতিটা ঘরের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২লক্ষ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা।
এদিকে বুধবার (২২ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশব্যাপী ভূমিহীন পরিবারদের জমি ও ঘর হস্তান্তরের উদ্বোধন করেন। এদিন সকালে মোংলা উপজেলা অফিসার্স ক্লাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপংকর দাশ’র সভাপতিত্বে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।
এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ জাফর রানা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস.এ.আনোয়ার-উল কুদ্দুস, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ জাহিদুল ইসলাম, সহকারী প্রোগ্রামার (উপজেলা আইসিটি অফিসার) সৌমিত্র বিশ্বাস, উপজেলা সমবায় অফিসার মোঃ জুবাইর হোসেন, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার সবুজ বৈরাগী, বুড়িরডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান উদয় শংকর বিশ্বাস, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতারা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপংকর দাশ বলেন, ঘর গুলি নির্মাণে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। বাজারের সবচেয়ে ভালো ব্র্যান্ডের সিমেন্ট, টিএমটি বার রড, ভালো ইট, উন্নতমানের পিকেট খোয়া, ভালো মেহগনি কাঠ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। নিজের কাজ মনে করেই এসব কাজ করা হয়েছে। এসব দুস্থ পরিবার গুলো যেন এসব ঘরে বসবাস করে শান্তি পায় সে বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করা হয়েছে। দেশের সব দরিদ্র ও ভূমিহীন মানুষদের পর্যায়ক্রমে আশ্রয়ের ঠিকানা গড়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর এই মানবিক উদ্যোগ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ উদ্যোগ সারা বিশ্বের মধ্যে অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বলে অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, যা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।