প্রত্যয় নিউজডেস্ক: জাতীয় কংগ্রেসের আগে দেশব্যাপী চলমান শুদ্ধি অভিযানের প্রতিফলন থাকবে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। ক্যাসিনোকাণ্ড, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজিসহ নানা অনিয়মে জড়িত নেতাদের বাদ দিয়ে গঠিত হবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এ কারণে গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করার পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে সময় নিচ্ছে সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী এ সংগঠনের একাধিক সূত্রে জানা যায়, দেশব্যাপী চলা শুদ্ধি অভিযানে যুবলীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার নাম আসার পর সংগঠনটির ভেতরেও সংস্কার এবং নতুন মেরুকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিগত জাতীয় কংগ্রেসের আগেই যুবলীগ নেতাদের বয়স নির্ধারণ, বিতর্কিত নেতাদের কমিটি থেকে অব্যাহতি, বহিষ্কারসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এসব সাংগঠনিক পদক্ষেপের ধারাবাহিকতার প্রতিফলন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও প্রতীয়মান চান যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর সংগঠনের জাতীয় কংগ্রেসের পর থেকে এই দুই শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে চলছে যুবলীগের কার্যক্রম। দেশব্যাপী শুদ্ধি অভিযানের প্রেক্ষাপটে জাতীয় কংগ্রেসের আগে সংগঠনের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পাশাপাশি সংগঠনটির একাধিক নেতা আটকও হন। যার প্রভাব পড়ে জাতীয় কংগ্রেসে। কংগ্রেসের আগে যুবলীগের নেতা হওয়ার জন্য ৪৫ বছর বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের বিদায়ী কমিটির এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পেতে সংগঠনের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তদবির চালাচ্ছেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নেতারাও পদের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন যুবলীগের শীর্ষ দুই নেতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্যরা কিছুই জানেন না।
যুবলীগ সূত্রে আরও জানা যায়, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে জাতীয় কংগ্রেসের আগে একাধিক নেতাকে বিভিন্ন পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান বা বহিষ্কার করা হয়। জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবার পরও সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক অন্তত ২৭ জন নেতাকে বহিষ্কার করেন। দুটি জেলা শাখার কার্যক্রম স্থগিত রাখার পাশাপাশি নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সংগঠনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত নেতাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে যেন ওই সব বিতর্কিত নেতাদের অনুসারীরা কোনো পদে না আসতে পারে সে বিষয়েও সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতা সচেতন রয়েছেন।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদ্যবিদায়ী কমিটির অপর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুদ্ধি অভিযানে যুবলীগের নেতাদের নাম উঠে আসায় জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হওয়ার পরও কমিটি গঠনে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সংগঠনের ইমেজের স্বার্থে নতুন কোনো বিতর্ক যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি শুদ্ধি অভিযানে আটক হওয়া বা সংগঠনকে বিতর্কের মুখে ফেলা দেয়া নেতাদের অনুসারীরা যেন সংগঠনের কোনো দায়িত্বশীল পদে আসীন হতে না পারেন সেজন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে সময় নেয়া হচ্ছে।
যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করার পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শুদ্ধি অভিযানের প্রভাব অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকবে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী কোনো নেতাকে আমরা সংগঠনে চাই না। এ বিষয়ে আপনাদের কাছেও (সাংবাদিক) আমরা সহযোগিতা চাই। আপনাদের কাছে যদি কোনো তথ্য থাকে, তা দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।