জসিম তালুকদার,দ: চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:গতকাল ১৭ এপ্রিল শনিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে দশটার সময় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা ইউনিয়নে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক অসন্তোষের জের ধরে শ্রমিক-পুলিশে মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে ৫ জন শ্রমিক নিহত এবং ফাঁড়ির পুলিশসহ অন্তত অর্ধশতাধিক জন আহত হয়েছেন।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব সাইদুজ্জামান চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, হাসপাতাল থেকে ৫ জনের মৃত্যুর খবর তাদের নিশ্চিত করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন, বাঁশখালী অত্র ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনার ৮ নং ওয়ার্ডের মৃত মাওলানা আবু ছিদ্দিক এর পুত্র হাফেজ মাহমুদ রেজা (২৩), কিশোরগন্জ জেলার মিঠামইন থানার শাহেদ নগর এলাকার মুহাং ফারুক মিয়ার পুত্র হাফেজ রাহাতুল ইসলাম (২২), চুয়াডাঙ্গার জেলার জীবন নগরের অলি উল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ রনি(২৩), কুমিল্লা জেলার চাঁদপুর থানার নজরুল ইসলামের পুত্র মুহাম্মদ শুভ (২৭), নোয়াখালী হাতিয়া উপজেলার আর্দশ গ্রামের আব্দুল মতিনের পুত্র মুহাম্মদ রায়হান (৩০)।
আহতরা হলেন, মুহাং মিজান, হাবিবুল্লাহ, মুহাং রাহাত, মুরাদ, শাকিল,দিদার, কামরুল,মাসুম আহমদ,আমিনুল হক,ওমর, অভি।
আহত পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা হলেন, মুহাম্মদ ইয়াসির, আব্দুল কবির,ও আসাদুজ্জামান।
রিপোর্ট লেখা পষর্ন্ত এই হতাহতের নাম জানা গেছে।
কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় সংঘর্ষটি সকাল সাড়ে দশটার দিকে শুরু হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছেন। শহর থেকে অতিরিক্ত ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে পৌছান। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাঁশখালী।
সংঘর্ষের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেতনভাতা নিয়ে নানা সমস্যা চলছিলো তবে আজকের সংঘর্ষটি কেন হলো সেটি হয়তো তদন্তের পর বলা যাবে।
অনুসন্ধানে যানাযায়, শ্রমিক নিহত আহমদ রেজা পরিবারের সদস্যরাসহ ও শ্রমিকেরা জানান, প্রজেক্ট কর্তৃপক্ষ মাসিক বেতন ২/৩ মাস বন্ধ রাখা, পবিত্র রমজানের তারাবীহ ও ইফতারে বাঁধা দেয়া,রমজানে শ্রমঘন্টা কমানো,মার্চ মাসের বেতন প্রদানসহ প্রতিমাসের ৫ তারিখে বেতন পেইটের দাবিতে গত সপ্তাহ থেকে ক্ষোভ জানিয়ে আসছিলেন শ্রমিকরা।
গতকাল সকালে শ্রমিকরা প্রতিবাদের ডাক দিলে এই সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। প্রজেক্টের কয়েকি গাড়ীও পুড়ানো হয়।
চট্টগ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলছেন এলাকাটি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। এবং চট্টগ্রাম রেন্জের ডিআইজি জনাব আনোয়ার হোসেন সুষ্ঠ তদন্তের জন্য তদন্ত কমিটির ঘোষণা দেন।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক বলেন, এ অনাকাঙ্খিত ঘটানায় নিহত শ্রমিকদের পরিবার প্রতি ৩ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নে এই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে এলাকার জনমত শুরু থেকেই বিভক্ত হয়ে পড়ায় আগেও কয়েকবার সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
২০১৬ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রটি নির্মাণের পক্ষ বিপক্ষে মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে ৪ জন নিহত হয়েছিলো।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতেও কেন্দ্রটি নিয়ে মত বিনিময় সভা চলাকালে সংঘর্ষে ১জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ গতকাল ১৭ এপ্রিল শনিবার ২০২১ সালে ৫ জন শ্রমিক পুলিশের গুলিতে নিহত হয়।
SS Power, 1320 Coal Fired Power Project, বাশঁখালী, এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বেসরকারি পর্যায়ের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তবে এটি বাস্তবায়িত হচ্ছে SEPCO3 সাথে। SEPCO 3 প্রজেক্ট বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান EPC। বর্তমানে প্রজেক্টে নিয়োজিত সকল শ্রমিক কর্মচারী EPC’র তত্ত্বাবধানে নিয়োগকৃত।
তাদের নিয়োগ থেকে শুরু করে তাদের বেতন ও মজুরি, ছুটি সবকিছুই EPC নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
আরও পড়ুন : হেফাজত নেতা মামুনুল হক গ্রেফতার