সেলিম সানোয়ার পলাশ, রাজশাহী ব্যুরোঃ চাঁদার টাকার হিসাব চাইতে গিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনার সময় পড়ে গিয়ে এক ট্রাক চালক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে শ্রমিকরা তার লাশ রাজশাহী নগরীর ঘোড়ামারা এলাকায় জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে নিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। দুই পক্ষের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। নিহত ট্রাক চালকের নাম সোহরাব আলী (৩৫)। তার বাড়ি নগরীর খোজাপুরে।
রাজশাহীতে ট্রাক শ্রমিকদের কল্যাণে রাস্তা থেকে তোলা হয় লাখ লাখ টাকা। কিন্তু দেশের এই দুর্যোগকালীন সময়ে শ্রমিকদের সেই টাকার হদিস নেই। তাই রাজশাহীর ট্রাক শ্রমিকরা জড়ো হয়ে চাইতে গিয়েছিলেন টাকার হিসাব। তখন ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এর ভেতরে পড়ে এক ট্রাকচালক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শুক্রবার সকাল থেকে শ্রমিকরা ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। টাকার হিসাবের দাবিতে অবরুদ্ধ করে রাখেন জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে। তখন মনির হোসেন নামে এক ট্রাকচালক বলেন, শ্রমিকদের উন্নয়নের নামে সড়কে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। কিন্তু এখন সেই টাকার কোনো হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি জানান, তাদের সংগঠনের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২ হাজার ৬০০ জন। সম্প্রতি তাদের ইউনিয়নের সভাপতি ফরিদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী কিছু শ্রমিককে ডেকে ৮ কেজি করে চাল ও ২ কেজি করে আলু দিচ্ছিলেন। শ্রমিকদের কেউ কেউ বেকায়দায় পড়ে নিয়েছেন। কিন্তু বেশিরভাগই সেই চাল-আলু প্রত্যাখান করে তাদের টাকার হিসাব চেয়েছেন। সেদিন ১১ মে হিসাব দেয়া হবে বলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক জানান। কথামতো তারা সেদিন ইউনিয়ন কার্যালয়ে যান। কিন্তু হিসাব না দিয়ে আবারও ১৫ মে দিন দেয়া হয়। কথামতো তারা এ দিনও এসেছেন। কিন্তু তাদের জানানো হয়েছে হিসাব প্রস্তুত করা হয়নি। তাই তারা অবস্থান নিয়েছেন।
সাজ্জাদ আলী নামের আরেক শ্রমিক বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ তিন বছর। গত ১৭ এপ্রিল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই কমিটির কাছে হিসাব প্রস্তুত থাকার কথা। কিন্তু টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে হিসাব প্রস্তুত নেই বলে মনে করেন তিনি। সাজ্জাদ ধারণা করেন, তিন বছরে এই কমিটির কাছে অন্তত ১৫ কোটি টাকা গেছে শ্রমিকদের উন্নয়নের নামে। কিন্তু এখন তাদের দিন চলছে না। তারা টাকার হিসাব চাওয়ায় বর্তমান কমিটির কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
সাজ্জাদ বলেন, হাতাহাতির মধ্যে পড়েছিলেন ট্রাকচালক সোহরাব আলী। তিনি রোজাও রেখেছিলেন। এ রকম পরিস্থিতিতে তার রক্তচাপ বেড়ে যায়। অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মাথায় পানি দেয়া হয়। এরপর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। তখন চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর শ্রমিকরা একটি পিকআপে করে তার লাশ ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে আনা হয়।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারন চন্দ্র বর্মন বলেন, টাকার হিসাব চাইতে এসে এক শ্রমিক মারা গেছেন। তার লাশ ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে আছে। শ্রমিকরা উত্তেজিত। পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা চলছে। মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।