রাজশাহী প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে কারাগারের বন্দিদেরও ঝুঁকি বাড়ছে। এ অবস্থায় যাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে অথবা ছোট-খাটো মামলায় বন্দি রয়েছেন তাদের মুক্তির ব্যাপারে ভাবছে সরকার। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষও এখানকার প্রায় ৫০০ বন্দির মুক্তির জন্য সুপারিশ করেছে।
কয়েকদিন আগে কারা অধিদপ্তরে এই তালিকা পাঠানো হয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তালিকার বেশিরভাগই সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। কারও কারও সাজার মেয়াদ শেষ। তালিকায় বিচারাধীন মামলার মাত্র ১৬ জন হাজতি রয়েছেন। লঘু অপরাধের মামলায় দীর্ঘ দিন ধরেই তারা বন্দি।
সিনিয়র জেল সুপার জানান, ৩০ বছর কারাদণ্ডকে যাবজ্জীবন সাজা ধরা হয়। কারাগারে কোনো অপরাধে জড়িয়ে না পড়লে ২২ বছরের মতো বন্দি থাকলে যাবজ্জীবন সাজা খাটা শেষ হয়ে যায়। রাজশাহী কারাগারে ১২৮ জন বন্দি আছেন যাদের সাজার মেয়াদ শেষ অথবা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্দি আছেন। মুক্তির জন্য তালিকায় তাদের নাম উঠানো হয়েছে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, লঘু অপরাধে যারা দীর্ঘদিন কারাগারে আছেন এমন আসামিদের ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার বৈঠকে হত্যা, ধর্ষণ ও এসিড মামলার আসামি ছাড়া ছোট-খাটো অপরাধে যারা দীর্ঘদিন কারাগারে আছেন এমন কয়েদিদের কিভাবে মুক্তি দেয়া যায় সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি নীতিমালাও তৈরি করছে।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার বলেন, যাদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের মুক্তি দিতে বড় কোনো বাধা নেই। তবে হত্যা ও ধর্ষণ মামলার যেসব আসামির সাজা খাটা শেষ হয়নি তাদের হয়তো মুক্তি মিলবে না। যদিও তালিকায় এমন কিছু নামও রয়েছে। তাদের বিষয়টি সরকারই বিবেচনা করবে।
তিনি জানান, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে প্রায় ৫০০ বন্দির নাম তারা কারা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন। লঘু অপরাধের কয়েদিদের মধ্যে ছয় মাস, এক বছর বা দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের আলাদাভাবে তালিকা করা হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদেরও নাম রয়েছে আলাদা। আর যে ১৬ জন হাজতির নাম রয়েছে তারা ছোট-খাটো মামলার আসামি। এরা ৫১ ও ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার। রাজশাহী মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন ব্যক্তিও রয়েছেন তালিকায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুসারে কোনো বন্দি তার সাজার মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ খাটলে এবং সেই বন্দির বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ না থাকে তবে সরকার চাইলে বিশেষ সুবিধায় তাকে মুক্তি দিতে পারে। এ জন্য রাষ্ট্রপতির কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। তবে তালিকা খতিয়ে দেখার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর তা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে বন্দিকে মুক্তি দেয়া সম্ভব হয়।
সিনিয়র জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন বলেন, কারা অধিদপ্তর আমাদের কাছে তালিকা চেয়েছে। আমরা তালিকা দিয়েছি। সেটি মন্ত্রণালয়ে যাবে। সাজাপ্রাপ্ত কয়েদিদের মুক্তির ব্যাপারে রাষ্ট্র যে কোনো সময় সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু বিচারাধীন মামলার হাজতিদের মুক্তি কেবল আদালতেই হতে পারে। সেক্ষেত্রে আদালত বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তাদের জামিন দিতেও পারেন।
তিনি বলেন, রাজশাহী কারাগারে বন্দির ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৪৫০ জন। কিন্তু সব সময় এখানে অন্তত তিন হাজার ৪০০ জন বন্দি থাকেই। তাই এখানে নানা রকম সমস্যা রয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঝুঁকিও বাড়ছে। সে জন্য বন্দিদের যদি মুক্তি দেওয়াই হয় তাহলে রাজশাহী কারাগার থেকেও মুক্তি দেয়া হবে। তবে কতজন মুক্তি পাবেন তা এখন বলা সম্ভব নয়।