নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-২ (মিরপুর) ও অঞ্চল-৫ (কাওরান বাজার) এর সকল ওয়ার্ডে (১৭টি) পরীক্ষামূলকভাবে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ অভিযান (চিরুনি অভিযান) শুরু হয়েছে। ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম এ কাজের উদ্বোধন করেন। উদ্ধোধন কালে মেয়র বলেন, চিরুনি অভিযানে আমরা ‘ডোর টু ডোর’ যাব। এখানে বাসাবাড়ি থাকবে, অফিস-আদালত থাকবে থাকবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় থেকে চিরুনি অভিযান উদ্বোধন করেন তিনি।
এসময় মেয়র আরও বলেন, এ অভিযানের মাধ্যমে আমরা রাজস্বের পরিধি বাড়াব, ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়াব না। সবাই যাতে বাসায় বসে ট্যাক্স দিতে পারে, যেমনটা আমার নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’তে ছিল – আমরা অটোমেশনে যাব। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে অনলাইনে ট্যাক্স নেওয়া শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, এ বছর ৪০০ কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স এবং ১০০ কোটি টাকা ট্রেড লাইসেন্স থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে।
আবাসিক এলাকায় স্থাপিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মেয়র বলেন, আমাদের অনেক আবাসিক এলাকা আছে যেখানে নিচ তলায় দোকান করা হয়েছে। এ জন্য আগামী সপ্তাহে আমি রাজউককে আমার অফিসে আসতে বলব। কীভাবে আবাসিক ভবনে ব্যবসা চালানো হচ্ছে? যেহেতু এটা আবাসিক এলাকা আমরা ট্রেড লাইসেন্স দিতে পারি না। আবাসিক এলাকায় সিটি কর্পোরেশনের ক্ষমতা নেই ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার, কিন্তু এখানে ব্যবসা করছে। এটির একটি বিহিত করা দরকার।
আতিকুল ইসলাম আরো বলেন, আমাদের চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে আমরা আশা করব পর্যায়ক্রমে ঢাকা শহরে অনেক বড়বড় বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড অবৈধভাবে স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো সম্পূর্ণ বেআইনি। যারা এ রকম করেছেন তাদেরকে ট্যাক্সের আওতায় আনতে হবে। যারা অবৈধভাবে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড স্থাপন করছে তিনি তাদেরকে এরকম কাজ থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। এ শহর আমাদের সকলের। এখানে ব্যবসা করতে হলে নির্ধারিত হারে ট্যাক্স দিতে হবে। যারা হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছেন না, তাদেরকে ট্যাক্সের আওতায় আনার জন্য এ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
উদ্বোধনের পরে মেয়র বছিলায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, সুপার শপ, আবাসিক ভবন ইত্যাদি পরিদর্শন করেন। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ট্র্রেড লাইসেন্স না থাকা, সড়কে মালামাল রাখা, অবৈধভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার ইত্যাদি অপরাধে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে শাহজালাল বেকারি, সুপারশপ স্বপ্ন, ভিশন ইলেক্ট্রনিক্স, পারটেক্স ফার্নিচার, মির সিরামিক, কাই এলুমিনিয়াম। মোহাম্মদপুরের কাদেরিয়া আবাসিক এলাকার জনৈক ব্যক্তি যথাযথভাবে হোল্ডিং টাক্স পরিশোধ করায় মেয়র তাকে স্যালুট জানান।
উল্লেখ্য, আর্থিক স্বনির্ভরতা অর্জন করে নাগরিক সেবা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের দোরগোড়ায় পৌছানোর লক্ষ্যে করের হার না বাড়িয়ে করের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ডিএনসিসি। এ লক্ষ্যে আজ থেকে মাসব্যাপী এ চিরুনি অভিযান চলবে। ডিএনসিসির অন্যান্য অঞ্চলেও পরবর্তীতে এই চিরুনি অভিযান পরিচালিত হবে।
এই চিরুনি অভিযানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, করের পরিধি বাড়ানো; বাদ পড়া হোল্ডিং বা প্রতিষ্ঠানকে করের আওতাভূক্ত করা; রাজস্ব বিভাগের কার্যক্রমে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা; রাজস্ব বিভাগের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; এবং জনসাধারণকে পৌরকর প্রদানে উৎসাহ প্রদান করা। চিরুনি অভিযানে কর বহির্ভূত বাড়ি-ঘর/স্থাপনাকে এবং নতুন সৃষ্ট ফ্ল্যাট/বাড়ি-ঘর/স্থাপনা করের আওতায় আনা হবে।
এছাড়া ট্রেড লাইসেন্সবিহীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা ও আইনসম্মতভাবে ট্রেড লাইসেন্সের আওতায় আনা হবে এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ ট্রেড লাইসেন্স দ্বারা পরিচালিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা ও নবায়নের আওতায় আনা হবে। চিরুনি অভিযান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে আহবায়ক এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরকে যুগ্ম আহবায়ক করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। একজন উপকর কর্মকর্তা কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। এই কমিটি কর বহির্ভূত বাড়ি-ঘর এবং ট্রেড লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করবে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল হামিদ মিয়া এবং ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল আসিল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন