বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: টাকার ভেতরে তুলসি পাতা রেখে হিন্দু ভোটারদের ওয়াদাবদ্ধ করায় ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরসভা নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের ৫ জন আহত হয়েছে। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধানী রয়েছেন।
এ ঘটনায় হাতাহাতির ঘটনায় দুই মেয়র প্রার্থীই থানায় পৃথক মামলা দিয়েছেন। এতে কম্পিউটার প্রতীকের এক সমর্থককে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ।
আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান (নৌকা) ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক (বহিস্কৃত) রফিউল ইসলামের (কম্পিউটার) সমর্থকদের মধ্যে বুধবার রাতে রংপুরিয়া মার্কেট এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।আহতরা হলেন কম্পিউটার প্রতীকের সমর্থক ৬নং ওর্য়াড আ’লীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম (৬৫) তার ছেলে বেলাল হোসেন (৩৫) ও পৌর আ’লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মতিউর রহমান (৪৫) তার স্ত্রী মিশিরণ বেগম (৩৫) ও নৌকার সমর্থক হোসেগাঁও ইউপির উজধারী গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে ফুল মিয়া (৩৮)।
বৃহস্পতিবার (১১ফ্রেরুয়ারী) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কম্পিউটার প্রতীকের সমর্থক মতিউর রহমানকে গ্রেফতার করে ঠাকুরগাঁও আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
সহিংসতা উত্তপ্ত পরিবেশের মধ্যেই আ’লীগের ৪ বিদ্রোহী প্রার্থী রফিউল ইসলাম (কম্পিউটার) রুকুনুল ইসলাম ডলার (রেল ইনিঞ্জন) সাধন কুমার বসাক (নারিকেল গাছ) ও নওরোজ কাউসার কানন (চামুচ) ঐ রাতেই রংপুরিয়া মার্কেটে এক কাতারে থেকে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পরে সকলে মিলে এক মৌন মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সাক্ষাত করে প্রতিবাদ জানান।
৩নং ওয়ার্ডের মদনের স্ত্রী বিষদেবী রায় জানান, বুধবার রাতে আমাদের এলাকায় নৌকার কর্মীরা এসে ভোটারদের হাতে টাকা মুড়িয়ে দিয়ে হাতে হাত রেখে ভোট দেওয়ার ওয়াদা করাচ্ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আমার বাড়ীতেও আমাদের হিন্দু সম্প্রদায় নারী রুমকি রায় আমার হাতে টাকা গুজে দিয়ে ওয়াদা করায় ভোট দিতে। তখন আমি তাদের সামনে টাকা খুলে দেখতেই দেখি টাকায় মোড়ানো তুলসি পাতা। তুলসি পাতা হল আমাদের ধর্মের বড় একটি বিষয়। এভাবে ভোট নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তৎক্ষণাৎ আমি প্রতিবাদ করি।
প্রতিবাদ করায় নৌকার সমর্থকরা আমাদের বাড়ীতে এসে হট্টগোল বাধায়। খবর পেয়ে কম্পিউটার প্রতীকের সমর্থকরা চলে আসে। এতে নৌকার লোকজনের সাথে তাদের সঘর্ষ বাঁধে। ঐ এলাকার ধনদেবের স্ত্রী বুধি রায় (৫০) পুদ’র স্ত্রী ববিতা বলেন, আমাদের কাছেও ভোট নেওয়ার জন্য একশত করে টাকা দিয়েছে।
মেয়র প্রার্থী রফিউল ইসলামের অভিযোগ নৌকার কর্মীরা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় টাকায় মোড়ানো তুলসি পাতা দিয়ে ওয়াদা করে ভোট নেওয়ার চেষ্টাকালে এক হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী এর প্রতিবাদ করে। এতে তার উপর চড়াও হয় নৌকার কর্মী রুমকি রায়। এ নিয়ে বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়।
খবর পেয়ে মোস্তাফিজুর রহমান (নৌকা) তার দলবল নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে ঐ পরিবারের লোকজনকে হুমকি ধামকিসহ শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে। পঞ্চম নামে মুরব্বীকে চড় থাপ্পর দেয় নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নিজেই।
পরে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সইদুল হক পৌর আ’লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম আ’লীগ নেতা আহাম্মদ হোসেন বিপ্লব ও নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান নিজে পুলিশের উপস্থিতিতে কম্পিউটার প্রতীকের রংপুরিয়া মার্কেট অফিসে হামলা করে সমর্থকদের বেদড়ক মারপিট করেন।
নৌকার সমর্থকদের মারপিট থেকে নিজ স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে এক গৃহবধুও লাঞ্চিত হয়েছে। গুরুতর আহত মতিউর রহমান বুধবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানান, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সইদুল হকের নির্দেশে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় নৌকার সমর্থকরা। আ’লীগের সভাপতি আমাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল।
অপরদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার লোকজনের উপর উল্টো কম্পিউটার প্রতীকের লোকজন হামলা করেছে। এতে আমার এক কর্মী গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি রয়েছে।
তাছাড়া কম্পিউটার, নারিকেল গাছ , ক্যারামবোর্ড, চামুচ, রেল ইঞ্জিন প্রতীকের প্রার্থীরা একত্র হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তবে তিনি টাকায় মোড়ানো তুলসি পাতা দিয়ে ওয়াদা করে ভোট নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফিরোজ আলম জানান, গতকাল রাতের ঘটনায় মোট ৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। তবে রোগীদের অবস্থা গুরুতর দেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা তাদের ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর মেডিক্যাল হাসপাতালে রেফার্ড করেছি।
রানীশংকৈল থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম জাহিদ ইকবাল বলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বুধবারের রাতের ঘটনায় দুই পক্ষের পৃথক দুটি মামলা নেওয়া হয়েছে। কম্পিউটার প্রতীকের এক সমর্থককে গ্রেফতার করে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামীদের ধরার চেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গতঃ এ পৌরসভায় আ’লীগের ৭ বিদ্রোহীসহ ৮ জন, বিএনপির এক বিদ্রোহীসহ-২ জন, জাতীয় পার্টির-১জন ও নির্দলীয় ১জনসহ মোট ১২ মেয়র প্রার্থী। কাউন্সিলর পদে ৩৩জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ১৩ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। ভোট অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী। মোট ভোটার ১৪ হাজার ৭শত ২জন।