বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৬ অপরাহ্ন
ওয়েব ডেস্ক: লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করবে ডেনমার্কভিত্তিক মায়ের্সক গ্রুপের মালিকানাধীন সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষরের পথে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির মিলনায়তনে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বন্দর খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ)। প্রতিষ্ঠানটি ডেনমার্কভিত্তিক মায়ের্সক গ্রুপের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস বি.ভি.-এর সঙ্গে একটি ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষরের পথে রয়েছে, যার ফলে তারা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কাঠামোর আওতায় লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল (এলসিটি) প্রস্তুত ও পরিচালনা করবে। এপিএম টার্মিনালস এই প্রকল্পে ডিজাইন, ফাইন্যান্স, বিল্ড এবং অপারেট করবে। তবে, বন্দরটির মালিকানা থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের মূলধনী ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। এপিএম টার্মিনালস বি.ভি. সম্পূর্ণরূপে মায়ের্সক গ্রুপের মালিকানাধীন, যার সদর দপ্তর ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ দেশ ডেনমার্কে। যা বিশ্বে দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে এক নম্বরে অবস্থান করছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যনুসারে (২০২৪) প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ৩৩টি দেশে ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনা করছে এবং বিশ্বের শীর্ষ ২০টি বন্দরের মধ্যে ১০টি বন্দরের অপারেটর হিসেবে কাজ করে আসছে। শুধু ইউরোপ নয়, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশে তাদের বন্দর পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে এই প্রকল্প বাংলাদেশে বিশ্বমানের প্রযুক্তি, দক্ষতা ও কার্যকারিতা নিয়ে আসবে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল হবে দেশের প্রথম গ্রিন ও স্মার্ট পোর্ট। যা বর্তমান সক্ষমতার দ্বিগুণ আকারের জাহাজ ধারণ করতে পারবে। ২৪ ঘণ্টা নাইট ন্যাভিগেশন সুবিধাসহ পূর্ণমাত্রায় পরিচালিত হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরাসরি বৈশ্বিক শিপিং সংযোগ পাবে। রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকদের জন্য পরিবহন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
বাংলাদেশ প্রাপ্ত সুবিধাসমূহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৃহৎ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) চুক্তির আওতায় এপিএম টার্মিনালস পুরো মেয়াদকালে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করবে, যা হবে বাংলাদেশে এককভাবে সর্ববৃহৎ ইউরোপীয় ইক্যুইটি বিনিয়োগ। এপিএম টার্মিনালসের মতো একটি বিশ্বমানের বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আগমন করলে অন্যান্য খাতে অতিরিক্ত বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করবে। এলসিটি চালু হলে বন্দরটির কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ৮ লক্ষাধিক টিইইউ প্রতি বছর বৃদ্ধি পাবে, যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। টার্মিনালটি ২০৩০ সালের মধ্যে চালু হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি রাজস্ব ভাগাভাগির ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, যার মাধ্যমে সিপিএ প্রতি কনটেইনারে নির্দিষ্ট ডলার-নির্ভর রাজস্ব পাবে। একই সঙ্গে কর, শুল্ক এবং সামুদ্রিক আনুষঙ্গিক সেবার মাধ্যমে সরকারের আয়ও বাড়বে। এই প্রকল্পের নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে ৫০০-৭০০ জন সরাসরি কর্মসংস্থান এবং ট্রাকিং, স্টোরেজ, লজিস্টিকস ও স্থানীয় এসএমই খাতে কয়েক হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এপিএম টার্মিনালস বিশ্বমানের হেলথ, সেফটি, সিকিউরিটি ও এনভায়রনমেন্ট (এইচএসএসই) নীতিমালা প্রয়োগ করবে। দুর্ঘটনার হার কমিয়ে কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করবে। এপিএম উন্নত ডিজিটাল টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম, এলইএএন পদ্ধতি ও ফ্লো প্রসেস ফ্রেমওয়ার্ক বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামোকে আধুনিক করবে এবং স্থানীয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
ব্যবসায়িক ব্যয় হ্রাস ও দ্রুত সরবরাহ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রুত জাহাজ টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম ও কম কন্টেইনার ডেল টাইমের মাধ্যমে রপ্তানিকারকরা, বিশেষ করে পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হালকা প্রকৌশল খাতের উদ্যোক্তারা সময়মতো সরবরাহ দিতে সক্ষম হবেন, যা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে। এপিএম টার্মিনালসের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ ও ব্যবস্থাপকরা আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ পাবেন, যা দেশের সামগ্রিক লজিস্টিক খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। বন্দরটির বার্ষিক ৮ লক্ষাধিক টিইইউ মালবাহী সক্ষমতা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও অন্যান্য অর্থনৈতিক করিডোরে নতুন ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো, কোল্ড চেইন ও শিল্পাঞ্চল স্থাপনে উৎসাহ দেবে।
আশিক চৌধুরী আরো বলেন, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের বন্দর খাতকে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যাবে। এটি কেবল একটি অবকাঠামো বিনিয়োগ নয় বরং বাংলাদেশের লজিস্টিকস খাতের ফিউচার-রেডি করে তুলবে। যা আমাদের রপ্তানি, কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।