নিজস্ব প্রতিবেদক: স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘শিগগিরই দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যাচ্ছে সরকার। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলতে হবে। পরে এসব ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে প্লান্টের মাধ্যমে বার্ন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।’
আজ (বুধবার) রাজধানীর উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে উত্তর সিটি করপোরেশন অধীন কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন এবং ছোট-বড় শহরে, এমনকি গ্রামগঞ্জ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। দেশেও সব ধরণের বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’
ডিএনসিসির অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী
শহর ও গ্রামাঞ্চলে পশু-পাখির মৃতদেহসহ ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মৃত পশু-পাখির দেহের অংশ ছড়িয়ে ও ছিটিয়ে থাকায় একদিকে যেমন এগুলো পচে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে মাটি, পানি ও বায়ু দূষণসহ সার্বিকভাবে পরিবেশ দূষিত হয়। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য সচেতন নাগরিক হয়ে যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে পরিচ্ছন্ন নগরী তথা দেশ গড়তে হবে।’
’পরিচ্ছন্নকর্মীরাও মানুষ, তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিকতা, সম্মান ও দায়িত্ব রয়েছে। তাদেরও উন্নত জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখা এবং স্বপ্ন পূরণের অধিকার আছে’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সবাই উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ পাবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সারা জীবন আন্দোলন-সংগ্রাম করে গেছেন। সব মানুষ দেশের নাগরিক। সব মানুষ যাতে তাদের মৌলিক অধিকার পায় এই বিষয়টাকে বঙ্গবন্ধু আন্তরিকভাবে অনুধাবন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর অনুধাবন থেকে শিক্ষা নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নকর্মী থেকে শুরু করে সব খেটে খাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।’
পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানি পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করায় পরিচ্ছন্নকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী। তিনি খাবারের আয়োজন করায় উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রকেও ধন্যবাদ জানান।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি একটি ভিন্নধর্মী অনুষ্ঠান। এ ধরনের অনুষ্ঠান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে এর আগে আর হয়নি। আমরা মনে করি আমাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা, মশক নিধন কর্মীরা এই করোনাভাইরাসের মধ্যেও জীবনবাজি রেখে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। এই শহরকে পরিষ্কার করছেন। আজ আমরা প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মশক নিধন কর্মীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছি। আমি খেটে খাওয়া মানুষদের সঙ্গে সব সময় থাকতে চাই।’
মেয়র আরও বলেন, ‘আমি ২০১৯ সালে যখন মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শহরকে পরিষ্কার রাখে, তাদের জন্য একটি ভালো বাসস্থান নির্মাণ করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে গাবতলীতে ২২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ তলা বিশিষ্ট চারটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে ৪৮৪টি পরিবারের বাসস্থান হবে। ২০২১ সালে এ সব আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবে। এ সব ভবনের পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সন্তানদের জন্য স্কুল এবং উপাসনালয় তৈরি করা হচ্ছে। জনগণের ভোটে আমরা নির্বাচিত হয়েছি জনগণের পাশে থাকবো, এটাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী ও মেয়র পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মশক নিধন কর্মীদের সঙ্গে মধ্যাহ্ণভোজে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই, সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম সাইদুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন প্রমুখ।