নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকের শীর্ষ তিন গ্রাহক খেলাপি হয়ে পড়লে মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হতে পারে দেশের ২০টি ব্যাংক, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ঝুঁকির সঙ্কেত। ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে গেলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিঘ্ন হতে পারে বলে মত বিশেষকদের। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতার জন্য আরেকটি সম্ভাব্য হুমকি করোনাভাইরাস। করোনার ফলে দেশের ব্যাংকিং খাতসহ পুরো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের নীতিগত সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আশা করা হচ্ছে, এই নীতি-সহায়তার মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এতে বলা হয়েছে, করোনার কারণে ঋণগ্রহীতাদের সক্ষমতা কমায় ঋণ আদায়ে শিথিলতা এসেছে। যে কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদের আয় থেকে ব্যাংকিং খাত বঞ্চিত হবে। এতে ব্যাংকগুলোর আয় কম হবে। ফলে নতুন করে বেশি ঋণ বিতরণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম সুদে তহবিলের জোগান, সুদ বাবদ ভর্তুকি দিয়ে ব্যাংকগুলোর ক্ষতি মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে, আগামী বছর থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে। ফলে আগামী ছয় মাস উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং শিল্পখাত ঘুরে দাঁড়াবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনার প্রভাবে বিশ^ব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা কমায় এর দাম কমে গেছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত প্রবাসীদের কাছ থেকে আসা রেমিট্যান্স কমে যাবে। দেশের অর্থনীতিকে নেতিবাচক অবস্থা মোকাবিলা করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে পাঁচ ব্যাংকের কাছেই রয়েছে মোট খেলাপি ঋণের ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ। বাকি ৫৫ ব্যাংকে খেলাপির পরিমাণ ৫৪ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে ১০ ব্যাংকের কাছেই খেলাপি ঋণ রয়েছে ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ। বাকি ৫০ ব্যাংকে খেলাপির হার ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দ মানের খেলাপি ছিল ৮১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, বছরের (২০২০) প্রথম তিন মাস (জানুয়ারি-মার্চ) সময়ে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮২০ কোটি টাকা কমে ৯২ হাজার ৫১০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে বলে তথ্য দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা পর্যালোচনা প্রতিবেদনে মূলত বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও সক্ষমতার চিত্র তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম মূল্যায়ন করা হয়। আর্থিক খাতের গতি-প্রকৃতি, স্থিতিশীলতা ও তার প্রভাব এবং তা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপ, সম্পদের মান, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও তারল্যের নির্দেশকগুলো বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে এ প্রতিবেদনে।