শাহিন আহমদ,সিলেট জেলা প্রতিনিধি :
সিলেটের ওসমানীনগরে শ্বশুরবাড়ি থেকে ঈদের উপহার না পাওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী আরশ আলী ও শাশুড়ি মিনারা বেগমকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (৮ মে) দুপুরে ওসমানীগর থানা পুলিশ উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের তাহিরপুর গ্রামের মৃত ইছন আলীর বাড়ি থেকে শরিফা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত শরিফা বেগম (২০) হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পিটুয়া গ্রামের শাকিম উল্লাহর মেয়ে। তিনি ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
অভিযুক্ত আরশ আলী ও তার মা মিনারা বেগমের দাবি- শরিফা আত্মহত্যা করেছে। তবে পুলিশ বলছে- নিহত শরিফাকে বিছানায় শোয়ানো অবস্থা পাওয়া যায় এবং তার শরীরের একাধিক স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৯ মাস আগে ওসমানীনগর উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের তাহিরপুর গ্রামের মৃত ইছন আলীর ছেলে আরশ আলীর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার পুটিয়া গ্রামের শাকিম উল্লাহর ছোট মেয়ে শরিফার। বিয়ের কিছুদিন পর যৌতুকসহ নানা কারণে স্বামী আরশ আলী ও শাশুড়ি মিনারা বেগম তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। তবে শরিফা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় তার পরিবার তাকে সহ্য করে শ্বশুরবাড়িতে থাকার কথা বলে।
পরিবারের অভিযোগ, রমজানে শরিফা ও আরশ আলী শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যায়। এসময় তাকে ইফতার দিতে দেরি করার অভিযোগ করে জামাই আরশ আলী। এছাড়া আলাদাভাবে সাজানো থালায় ইফতার না দেয়ায় বাড়ি ফিরে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করে আরশ আলী। সবশেষ শুক্রবার (৭ মে) সন্ধ্যায় শরিফার বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ির লোকজনের জন্য ঈদের নতুন কাপড় না আসা নিয়ে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। একপর্যায়ে শরিফাকে তার স্বামী ও শাশুড়ি মারধর করে। বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাইকে ফোন করে জানায় শরিফা। পর সাহরির সময়ে শরিফার মোবাইল বন্ধ পান তার ভাই-বোনরা।
শরিফার বড় বোন জানান, শুক্রবার রাতে শরিফার ফোন পেয়ে শনিবার দুপুরে জামাই ও বেয়াই বাড়ির লোকজনের জন্য ঈদের নতুন পোশাক কেনেন শরিফার পরিবার। দুপুরে তা নিয়ে শরিফার শ্বশুরবাড়িতে রওনা করেন বড় বোন। পথিমধ্যে খবর আসে তার বোন খুবই অসুস্থ। এর কিছুক্ষণ পর জানানো হয়, শরিফা আত্মহত্যা করেছেন।
তিনি জানান, পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। ওসি শ্যামল বণিকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শরিফার শরীরে একাধিকস্থানে আঘাতের চিহ্ণ থাকায় তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গে প্রেরণ করে।
নিহতের বড় ভাই মিনার হোসেন বলেন, বিয়ের পর থেকেই আমার বোনের ওপর তার স্বামী ও শাশুড়ি যৌতুকের জন্য নির্যাতন করতেন। তাদের নির্যাতনের কারণে আমরা তাকে নিয়ে যেতে চাইলেও গর্ভের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমার বোন সব কিছু নীরবে সহ্য করে যেত। আমার বোনকে তারা হত্যা করেছে। আমরা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শাস্তি চাই।
ওসমানীগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ্যামল বনিক বলেন, খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। মরদেহের একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহতের স্বামী ও শাশুড়িকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।