প্রথমেই জানা দরকার যে, ‘সাকিনাহ’ কি? এটি কার ওপর নাজিল হয়? আর সাকিনাহ পেতে মুমিনের কোনো করণীয় বা দোয়া আছে কি?
সাকিনাহ কি?
‘সাকিনাহ’ হচ্ছে শান্তি, প্রশান্তি, স্বস্তি ও সান্ত্বনা। মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মুমিনের জন্য প্রশান্তিই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ সাকিনাহ। কুরআন সুন্নাহর একাধিক স্থানে সাকিনাহ শব্দের ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়।
এ ‘সাকিনাহ’ হচ্ছে এক প্রকার মানসিক প্রশান্তি, স্বস্তি, সান্ত্বনা, স্থিরতা ও সহনশীলতা। যা আল্লাহ তাআলা বান্দার অন্তের ঢেলে দেন। ফলে যত ভয়-ভীতি ও বিপদাপদ আসুক না কেন সে হতাশ হবেন না, অস্থির হবেন না, ভেঙ্গে পড়বেন না বরং মানসিকভাবে শক্তি ও সাহস খুঁজে পাবেন।
এ সাকিনাহ নাজিল করার মাধ্যমেই মহান আল্লাহ তাআলা মুমিনের ঈমান আরও বাড়িয়ে দেন। সেই সঙ্গে আল্লাহর প্রতি বান্দার আস্থা ও নির্ভরতা আরও বেশি সুদৃঢ় হয়।
সাকিনাহ বা প্রশান্তি মহান আল্লাহর তাআলা বিশেষ অনুগ্রহ। তিনি মুমিন বান্দার প্রতি তা নাজিল করেন। এ সাকিনাহ বা প্রশান্তি অবতীর্ণ হওয়ার ফলে মুমিন বান্দার অন্তরে যেমন প্রশান্তি বেড়ে যায়, তেমনি ওইসব ঈমানদারদের সঙ্গে চলাফেরাকারী সঙ্গীদের ঈমানও বেড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
هُوَ الَّذِي أَنزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَّعَ إِيمَانِهِمْ
‘তিনি মুমিনদের অন্তরে সাকিনাহ (প্রশান্তি) অবতীর্ণ (দান) করেন; যাতে তাদের ঈমানের সঙ্গে আরও ঈমান বেড়ে যায়।’ (সুরা আল-ফাতহ : আয়াত ৪)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কুরআন তেলাওয়াতকারীর প্রতি এ সাকিনাহ নাজিল হয়।’ হাদিসের বর্ণনায় তা প্রমাণিত-
হজরত বারা ইবনে আজেব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘একবার এক ব্যক্তি সুরা কাহফ তেলাওয়াত করছিল। তার পাশেই দুটি রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ওই সময় এক খণ্ড মেঘ তাকে ঢেকে নিল। মেঘের খণ্ডটি যতই লোকটির কাছাকাছি হতে লাগলো; তা দেখে ঘোড়াটি চমকাতে আরম্ভ করল। অতপর যখন সকাল হল তখন লোকটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলেন এবং ঘটনাটি বর্ণনা করলেন। ঘটনাটি (শুনে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সেটি ছিল ‘সাকিনাহ বা প্রশান্তি’; যা তোমার কুরআন তেলাওয়াতের কারণে নাজিল হচ্ছিল।’ (বুখারি ও মুসলিম)
সাকিনাহ লাভের উপায় ও দোয়া
আল্লাহর রহমত ছাড়া সাকিনাহ বা প্রশান্তি পাওয়ার কোনো উপায় নাই। সে কারণেই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, কুরআন তেলাওয়াত করা কিংবা আল্লাহর বিধানগুলো মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। তাই মুমিন মুসলমানের উচিত-
– বেশি বেশি জিকির ও দোয়া করা।–
اَللَّهُمَّ أَنْزِل عَلَى قَلْبِىْ السَّكِيْنَة
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আংযিল আলা ক্বালবি সাকিনাহ’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে সাকিনাহ বা প্রশান্তি দান করুন।’
– কুরআন তেলাওয়াত করা।
– বেশি বেশি তওবা-ইসতেগফার করা।
– নিজের কাজের আত্মসমালোচনা করে সংশোধন হওয়ার প্রচেষ্টা করা।
– ভালো-মন্দ সব বিষয়ে আল্লাহর ফয়সালার ওপর বিশ্বাস রাখা।
– কল্যাণ লাভে আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ করা।
– গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা।
– আল্লাহর দেয়া ফরজ বিধান ঈমানি মজবুতির সঙ্গে আদায়, ফরজ নামাজে যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি বেশি বেশি নফল ইবাদত করা।
– সৎ লোকদের সংস্পর্শে থাকা।
– সব সময় অল্প প্রাপ্তিতেই সন্তুষ্ট থাকা এবং দুনিয়ার দিকে উচ্চভিলাষী দৃষ্টিতে তাকানো থেকে বিরত থাকা।
তবেই আল্লাহ তাআলা মুমিন বান্দার প্রতি নাজিল করবেন সাকিনাহ বা প্রশান্তি। দান করবেন ঈমানের মিষ্টতা, অনাবিল সুখ, শান্তি ও পরিতৃপ্তি। আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। আমিন।
মনে রাখা জরুরি
সাকিনাহ যেহেতু বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত বা অনুগ্রহ। তাই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবনযাপনের বিকল্প নেই।
যখনই বান্দা মহান আল্লাহর রঙে নিজের জীবন রাঙিয়ে তুলবে তখনই তার ওপর নাজিল হতে থাকবে সাকিনাহ বা প্রশান্তি। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে আসবে বিজয় ও ক্ষমা এবং জীবন নেয়ামতে পরিপূর্ণ হবে। আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলেন-
‘(হে রাসুল!) নিশ্চয় আপনার জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট বিজয়। যাতে আল্লাহ তাআলা আপনার অতিত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আপনার প্রতি তার নেয়ামত পূর্ন করে দিয়েছেন। আর আপনাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন। আর আপনাকে দান করেছেন বলিষ্ট সাহায্য। তিনিই সেই মহান সত্তা; যিনি মুমিনের অন্তরে প্রশান্তি নাজিল করেন। যাতে তাদের ঈমানের সঙ্গে আরও ঈমান বেড়ে যায়। আসমান ও জমিনের সব বাহিনী মহান আল্লাহর জন্য। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা ফাতহ : আয়াত ১-৪)
আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে দান করুন তার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নেয়ামত সাকিনাহ। যে সাকিনাহ লাভে মুমিন হবে ধন্য। পাবে গোনাহমুক্ত নেয়ামতে পরিপূর্ণ জীবন। আমিন।