স্পোর্টস ডেস্ক: ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের কারণে অনিশ্চয়তার সুতোয় ঝুলছিল এশিয়া কাপের ভাগ্য। ভারতের আপত্তির মুখে আয়োজক পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একাধিক মডেলের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। কিন্তু কোন কিছুতেই যেন মন গলছিল না চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের! অন্যদিকে টুর্নামেন্টকে আলোর মুখ দেখাতে মরিয়া ছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। মাস তিনেকের ‘নাটক’ শেষে অবশ্য এক বিন্দুতে মিলেছে ভারত-পাকিস্তান। ফলে আগামী ৩০ আগস্ট থেকে মাঠে গড়াচ্ছে এশিয়া সেরার লড়াই।
এশিয়া কাপের এবারের আসরে অংশ নেবে ছয় দল। এই ছয় দলের সম্ভবনা নিয়ে ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে ঢাকা পোস্ট। আজ তৃতীয় পর্বে থাকছে আফগানিস্তানের স্কোয়াড নিয়ে কাটা-ছেঁড়া।
গত এশিয়া কাপে ‘বি’ গ্রুপে ছিল আফগানিস্তান। যেখানে তাদের সঙ্গী ছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। শক্তিমত্তা বিচারে গ্রুপের আন্ডারডগ ছিল আফগানিস্তান। কিন্তু সব হিসেব পাল্টে দেয় তাদের মাঠের পারফরম্যান্স। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে আসরে পা রাখে আফগানরা। পরের ম্যাচে বাংলাদেশকেও হারিয়েছে হেসে-খেলেই। ফলে দুই ম্যাচের সবকটি জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সুপার ফোরে জায়গা করে নেয় তারা। তবে আসরের শেষ ভাগে তাদের পারফরম্যান্সে ভাটা পড়ে। কিন্তু গ্রুপ পর্বে তারা যা করে দেখিয়েছে সেটাই বা কতজন ভেবেছিল!
গত আসরের এসব পুরোনো কাসুন্দি নতুন করে ঘাটার কারণ, এবারের আসরেও একই গ্রুপে পড়েছে এই তিন দল। সর্বশেষ আসরের মতো এবারও আফগানরা শক্তিমত্তার বিচারে আন্ডারডগ। কিন্তু বাস্তব চিত্র পরিসংখ্যানের থেকে অনেকটাই ভিন্ন। এই যেমন পাকিস্তানের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজেও চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে আফগানিস্তান। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রীতিমতো কপালের জোড়েই জয় পেয়েছে পাকিস্তান। না হয়, বেশির ভাগ সময়ই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল আফগানদের হাতে। শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের কন্ডিশন, উইকেট, প্রতিপক্ষ আর নিজেদের শক্তিমত্তা সবদিক বিবেচনায় এবারের এশিয়া কাপে বড় সম্ভাবনাই থাকবে রশিদ খান-মুজিব উর রহমানদের।
আফগানদের ব্যাটিংয়ে ভালো শুরু এনে দেওয়ার দায়িত্ব থাকবে রহমানুল্লাহ গুরবাজের ওপর। এই ওপেনারের অভিজ্ঞতা এশিয়া কাপের বড় মঞ্চে দলের জন্য বাড়তি পাওয়া। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগসহ বেশিরভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেই দেখা মেলে গুরবাজের। সাম্প্রতিক সময়ে তার পারফরম্যান্সও আশা জাগানিয়া। সবমিলিয়ে আফগানদের ইনিংসের ভীত গড়ার দায়িত্বটা তার কাঁধেই থাকছে। গুরবাজের সঙ্গে ওপেন করবেন ইব্রাহিম জাদরান। তার সাম্প্রতিক ফর্ম খুব একটা ভালো না হলেও ইতোমধ্যেই তিনি নিজেকে প্রামণ করেছেন। বড় মঞ্চেই স্বরূপে ফিরবেন এই ওপেনার এমনটাই চাইবে টিম ম্যানেজমেন্ট। এই দুইজনের ব্যাকআপ হিসেবে আছেন রিয়াজ হাসান।
তিন নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে থাকবেন রহমত শাহ। তার অভিজ্ঞতা আর বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য আফগানদের ব্যাটিং অর্ডারে ভারসাম্য আনবে। চারে খেলবেন হাশমতউল্লাহ শাহিদি। অধিনায়কত্ব সামলানোর পাশাপাশি দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে ব্যাট হাতেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে এই মিডল অর্ডার ব্যাটারকে। পাঁচে খেলবেন নজিবুল্লাহ জাদরান। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার মিডল অর্ডারে বড় ভরসার নাম। তার পাওয়ার হিটিং সামর্থ্য দলের জন্য বাড়তি পাওয়া। মিডল অর্ডারে ব্যাকআপ হিসেবে আছেন ইকরাম আলীখিল। প্রথম উইকেটকিপার গুরবাজের বিকল্পও এই তরুণ উইকেটকিপার ব্যাটার।
আফগানিস্তানের স্কোয়াডে আছে বেশ কয়েকজন অলরাউন্ডার। ১৭ জনের স্কোয়াডে ব্যাটিং-বোলিং দুইটাই করতে পারেন ৬ জন। এই তালিকায় আছেন গুলবাদিন নাইব, করিম জানাত, মোহাম্মদ নবি, রহমত শাহ, রশিদ খান, শারফুদ্দিন আশরাফ। তাদের মধ্যে রহমত, রশিদ আর নবি একাদশে নিয়মিত খেলবেন। বাকিরা উইকেট আর প্রতিপক্ষ বিবেচনায় সুযোগ পাবেন।
আফগানদের বড় শক্তির জায়গা স্পিন বিভাগ। যেখানে নেতৃত্ব দেবেন রশিদ। এই লেগ স্পিনার শুধুই দেশ নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেরই সেরাদের একজন। আফগান পোস্টার বয়ের মূল কাজটা বোলিং, তবে ব্যাট হাতেও চমক দেখাতে পারেন তিনি। তার বিখ্যাত সেই স্ন্যাক শটে তান্ডব চালাতে পারেন প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর। এশিয়া কাপের বড় মঞ্চে শাহিদির সবচেয়ে বড় অস্ত্রটাও এই লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
স্পিনে রশিদ যদি দলটার সেনাপতি হন, তাহলে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সৈনিক মুজিব উর রহমান। এই দুই জনের রসায়ন যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্যই বড় হুমকি। এই স্পিন জুটির সঙ্গে নতুন যোগ হয়েছেন নূর আহমেদ। এই তরুণ লেগি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব একটা অভিজ্ঞ না হলেও ইতোমধ্যেই আলো ছড়িয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে। আপনি চাইলে তার নামটা আলাদা ভাবে মার্ক করে রাখতে পারেন। এশিয়া কাপের এবারের আসরের সারপ্রাইজ প্যাকেজ হতে যাচ্ছেন এই লেগ স্পিনার। আফগানিস্তানের এই স্পিনত্রয়ীকে নিয়মিতই একাদশে দেখা যাবে। সঙ্গে মোহাম্মদ নবিও বল হাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন।
আফগানিস্তানকে নতুন বলে ভালো শুরু এনে দেওয়ার দায়িত্ব থাকবে ফজল হক ফারুকির কাঁধে। এই বাঁহাতি মিডিয়াম পেসারের গতি আর সুইং যেকোনো ব্যাটারের জন্যই বিপদজনক। ফারুকির সঙ্গী হিসেবে থাকবেন করিম জানাত। একাদশে এই দুইজনকেই নিয়মিত দেখা যেতে পারে। স্পিন নির্ভর বোলিং আক্রমণ থাকায় তিন পেসারকে নিয়ে মাঠে নামার সম্ভাবনা খুবই কম।
আফগানিস্তান স্কোয়াড: হাশমতউল্লাহ শাহিদি (অধিনায়ক), রহমানুল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, রিয়াজ হাসান, রহমত শাহ, নাজিবুল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবি, ইকরাম আলীখিল, করিম জানাত, গুলবাদিন নায়েব, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, নূর আহমদ, শরিফউদ্দিন আশরাফ, ফজল হক ফারুকি, আবদুর রহমান , মোহাম্মদ সালিম।