প্রত্যয় ডেস্ক: স্লোভেনিয়ায় একদিনে রেকর্ডসংখ্যক করোনা আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মধ্য ইউরোপের এ দেশটিতে ২০৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। একদিনে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫৮৬৫ জন। মোট মৃত্যুবরণ করেছে ১৫২ জন। সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছে ৩৯০৬ জন। শুক্রবার দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় পরিস্থিতি ক্রমশই জটিল আকার ধারণ করছে। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমনকি অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপের অনেক দেশের তালিকায় নিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে স্লোভেনিয়ার নাম আর নেই। কর্তৃপক্ষ স্লোভেনিয়াকে ‘রেডজোন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তাই এখন থেকে স্লোভেনিয়া থেকে যদি কেউ অন্যান্য দেশে যাতায়াত করতে চায় তাহলে তাকে বাধ্যতামূলক করোরনার নেগেটিভ সনদ বহন করতে হবে। অন্যথায় তাকে ১০ থেকে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে।
ফার্স্ট ওয়েভে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্লোভেনিয়া ছিল ইউরোপের দেশগুলোর মাঝে একটি রোল মডেল। প্রতিবেশী দেশ ইতালি যেখানে প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণে অসংখ্য মৃত্যুর মিছিল দেখেছে সেখানে স্লোভেনিয়া ছিল করোনা প্রতিরোধে অনেকটা সফল। গত ১৫ মে ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে স্লোভেনিয়া করোনা মহামারি পরিস্থিতির অবসানের ঘোষণা দেয়। কিন্ত গত কয়েক দিন থেকে দেশটিতে ফের নতুন করে সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। দেশটিতে বসবাস করা অনেক সাধারণ মানুষ মনে করছেন দ্বিতীয় ধাপে স্লোভেনিয়া আরও একবার করোনা মহামারির সম্মুখীন হতে চলেছে।
সেকেন্ড ওয়েভে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টা পথে হাঁটা শুরু করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদি এ রকম প্রতিনিয়ত সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে থাকে তাহলে হয়তোবা রাত দশটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত সকল ধরনের বার, রেস্টুরেন্ট ও কফিশপ অর্থাৎ একসঙ্গে যেখানে অধিক মানুষের সমাগম হয় সেসব প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে এ সময়ে মানুষের যাতায়াতের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। তবে নতুন করে লকডাউন আরোপের বিষয়ে দেশটির সংসদ এখনও দ্বিধাবিভক্ত। দেশটির বাম ও উদারপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো লকডাউনের পক্ষে অবস্থান নিলেও ক্ষমতাসীন স্লোভেনিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রাজনৈতিক নেতারা একেবারে এর বিপক্ষে।
তাদের দাবি, এ মুহূর্তে নতুন করে করোনা মোকাবিলায় লকডাউন দেওয়া হলে দেশটির অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়বে যেখান থেকে সহজে উত্তরণ করতে পারাটা স্লোভেনিয়ার মতো ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশের জন্য বড় একটি কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। মূলত লকডাউন পরবর্তী প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত সংযোগ পুনরায় চালু করার পর বলকান রাষ্ট্র বিশেষত সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া থেকে মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধির কারণে স্লোভেনিয়াতে পুনরায় করোনাভাইরাসে আক্ৰান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করছে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলো।
একই সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনের জন্য অনেকে দেশটির বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে জড়ো হচ্ছেন। এছাড়াও স্লোভেনিয়ার জনসাধারণের একটা বড় অংশ অবকাশ যাপনের জন্য প্রতিবেশী দেশ ক্রোয়েশিয়ার সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে যাতায়াত করেন। অবকাশ শেষে যখন তারা স্লোভেনিয়াতে ফিরে আসছেন তখন তাদের অনেকের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হচ্ছে।
স্লোভেনিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় গণমাধ্যম এসটিএ বলছে, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সেখানকার জনসাধারণের মাঝে যেভাবে সতর্কতা দেখা যাছ্লি বর্তমানে তেমনটি আর দেখা যাচ্ছে না যা দেশটিতে করোনাভাইরাস বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দাবি করেছে এসটিএ।