মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গাকে বরণ করেছে ভাসানচর। শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সেখানে তারা পৌঁছলে করোনার কারণে সবার শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়। এরপর হাত ধুয়ে জেটি থেকে গাড়িতে করে তাদের আবাসস্থলে দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুদের চলাচলের জন্য সাহায্য করেন নৌবাহিনীর সদস্যরা। ভাসানচরে পৌঁছে অনেক রোহিঙ্গা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
এর আগে সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প থেকে রওনা দেয় রোহিঙ্গাদের প্রথম প্রতিনিধি দল। রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাতে ভাসানচরে নানা ব্যানার ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। সেখানে শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যানার ফেস্টুনও। সেসবে শেখ হাসিনাকে মাদার অব হিউমিনিটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)। বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের ভাসানচরে স্থানান্তরের বিষয়ে এনজিওগুলো বিরোধিতা করে আসছিল বলে এতদিন অভিযোগ ওঠে। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় সম্প্রতি ২২টি এনজিও নোয়াখালীর হাতিয়ার এই দ্বীপে কাজ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থার (স্কাস) চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা বলেন, ‘সরকার ও নৌ বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আমরা ২২টি এনজিও এখানে কাজ শুরু করেছি। আজকে যেসব রোহিঙ্গারা ভাসানচরে আসছে তাদের আপ্যায়ন করার জন্য নৌ-বাহিনীসহ দেশের সব ধরনের গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে রোহিঙ্গাদের টেক কেয়ারের জন্যও সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খাবার ও স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা। শিশু ও নারীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। নারীদের জন্য সরকারি নারী কর্মকর্তা রয়েছেন। এছাড়া আমরা এনজিওর পক্ষ থেকে অনেকেই আছি। তারা এখানে নিঃসন্দেহে ভালো থাকবেন।’
এর আগে একাধিকবার এসব এনজিও প্রতিনিধিরা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত আবাসন পরিদর্শনে এসে সরকারের সুপরিকল্পিত আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
আর টি এম ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার বলেন, ‘উন্নতমানের একটি আবাসিক এলাকায় যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে, তার সবই এখানে রয়েছে। কক্সবাজারের চেয়ে শতগুণ ভালো ভাসানচর। ফলে না দেখেই কারও বিরোধিতা করা উচিত নয়।’
সোশ্যাল এইডের কর্মকর্তা নুরুজ্জামান বলেন, ‘ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব সুবিধা রয়েছে এসবের অনেক সুবিধা আমার দেশের মানুষ পায় না। তাই আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি।’
জানা গেছে, ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সরকার ও এনজিওগুলোর পক্ষ থেকে ভাসানচরে ৬৬ টন খাদ্যসামগ্রী নেয়া হয়েছে। প্রথম দুই মাস তাদের রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হবে। এরপর নিজ নিজ বাসস্থানেই রান্না করতে পারবেন তারা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় তিন হাজার ১০০ কোটি টাকায় নির্মিত রোহিঙ্গাদের জন্য এই অস্থায়ী আবাসস্থল এখন কর্মমুখর। দ্বীপটি বাসস্থানের উপযোগী করা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বনায়ন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক বাসস্থান ছাড়াও বেসামরিক প্রশাসনের প্রশাসনিক ও আবাসিক ভবন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভবন, মসজিদ, স্কুল হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ভবন, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সেখানে মহিষ, ভেড়া, হাঁস, কবুতর পালন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। পরীক্ষামূলকভাবে ধান চাষও করা হচ্ছে এখানে।