আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অ্যামেরিকা চাইলেও ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়ার উপর তেল ও গ্যাস নিয়ে এখনই নিষেধাজ্ঞা জারির বিপক্ষে।
রাশিয়াকে আর্থিকভাবে চাপে রাখতে সেদেশ থেকে অশোধিত তেল ও গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। অ্যামেরিকা অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চায়। কারণ, রাশিয়ার অর্থনীতি তেল ও গ্যাসের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। রাশিয়াকে চাপে রাখতে এই পদক্ষেপ নিতে চায় অ্যামেরিকা।
কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা জারি হলে রাশিয়া তো বটেই, সেই সঙ্গে ইউরোপের দেশগুলিও প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও নেদারল্যান্ডসের নেতারা সোমবার জানিয়ে দিয়েছেন, তারা রাশিয়ার গ্যাসের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল। আর রাশিয়াও বলেছে, যদি তেল ও গ্যাসের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তাহলে প্রতি ব্যারেল অশোধিত তেলের দাম বেড়ে হবে তিনশ ডলার। আর কোনোরকম নিষেধাজ্ঞা জারি হলে তারা প্রথমেই জার্মানি-সহ ইউরোপের দেশগুলিতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।
জার্মানির চ্যান্সেলর শলৎস জানিয়েছেন, বার্লিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সমর্থন করে কিন্তু ইউরোপের মানুষের জীবনধারণের জন্য রশিয়া থেকে গ্যাস পাওয়া খুবই জরুরি। এক বিবৃতিতে শলৎস বলেছেন, ”শিল্প, বিদ্যুৎ সরবরাহ, যানবাহন, হিটিংয়ের জন্য ইউরোপ রাশিয়ার গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। এই মুহূর্তে তা অন্য কোনো জায়গা থেকে পাওয়া সম্ভব নয়।”
সরকারি সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী, জার্মানির আমদানির ৩৮ শতাংশই হলো রাশিয়ার গ্যাস। জার্মানির বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাঁচভাগের একভাগ এই গ্যাসের উপর নির্ভরশীল।
ধাপে ধাপে করা হোক
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ”রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর থেকে নির্ভরতা কমানো ঠিক পথ। তবে এটা ধাপে ধাপে করতে হবে।”
লন্ডনে নেদারল্যান্ডস ও ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার পর জনসন বলেছেন, ”আমাদের আগে বিকল্প গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা একটা বিকল্পের কথা ভাবছি, সেটা হলো আমাদের হাইড্রোকার্বন ব্যবহার করা।”
ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত সপ্তাহেই ঘোষণা করেছিলেন, তারা আর রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল নেবেন না। তবে ক্যানাডা হলো বিশ্বের চতুর্থ বড় তেল উৎপাদক দেশ। ফলে তারা রাশিয়ার তেলের উপর নির্ভরশীল নয়।
ইউরোপের অন্য দেশগুলির তুলনায় যুক্তরাজ্য রাশিয়ার গ্যাসের উপর অনেক কম নির্ভরশীল। কিন্তু জনসন বলেছেন, ”ইউরোপের দেশগুলি সকলে মিলে একটা দিকেই চলুক, এটা জরুরি।” তিনি জানিয়েছেন, ”ইউরোপের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর কমবেশি নির্ভরশীল। রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাসের সরবরাহ রাতারাতি বন্ধ করা সম্ভব নয়।”
ডাচ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ”রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে সময় লাগবে। কষ্টকর বাস্তব হলো, ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়ার গ্যাসের উপর খুব বেশি করে নির্ভরশীল।”
বিকল্পের খোঁজে ইইউ
জার্মান চ্যান্সেলার শলৎস বলেছেন, ”রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল বলেই ইউরোপ জেনেবুঝে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।” শলৎস জানিয়েছেন, ”রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের বিকল্প খুঁজে বের করতে গত কয়েকমাস ধরে ইউরোপের দেশগুলি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এটা রাতারাতি হওয়া সম্ভব নয়।”
বৃহস্পতিবার ফ্রান্সে ইইউ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন হতে পারে। সেখানে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কীভাবে কাটানো হবে, তার পরিকল্পনা পেশ করা হতে পারে। ইউরোপীয় কমিশনও এই সপ্তাহে একটি পরিকল্পনা পেশ করতে পারে।
দ্রুত ব্যবস্থা চায় অ্যামেরিকা
অ্যামেরিকা মনে করে, রাশিয়ার উপর নির্ভরশীলতা কাটানোর জন্য ইউরোপের পরিকল্পনা রূপায়ণে অনেক সময় লাগবে। অ্যামেরিকা অবিলম্বে রাশিয়ার উপর তেল ও গ্যাস সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চায়। অ্যামেরিকার পক্ষে এই চাপ দেয়া সহজ, কারণ, তারা ইউরোপের দেশগুলির মতো রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর নির্ভরশীল নয়।
বাইডেন বিষয়টি নিয়ে জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যের নেতাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন। ইউরোপীয় নেতারা বলেছেন, রাশিয়ার উপর যাতে আর্থিক চাপ বাড়ে সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করবেন। কিন্তু কীভাবে তা করবেন, তা তারা বলেননি।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স