এ বিষয়ে সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, ‘শ্রমিককল্যাণ তহবিলের অর্থ তছরুপের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মূলত ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পূর্ণ হিসাব দেখভাল করেন। সংগঠনের সভাপতি.হিসেবে আমাকে তারা সার্বিক বিষয় অবহিত করেন। এখন হিসাবে গরমিল থাকলে সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের ভালো জানার কথা।’
সূত্র মতে, সেলিম আহমদ ফলিক সিলেট বিভাগ পরিবহন সেক্টরের হর্তাকর্তা। টানা পাঁচবার সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পদে নির্বাচিত। তিনি যেমন আলোচিত, ঠিক তেমনি সমালোচিতও। অনেক শ্রমিকেরই ভাষ্যÑ ফলিকের বড়গুণ হচ্ছে শ্রমিকদের দুঃখে পাশে থাকা। যাত্রীবাহী বাসের ড্রাইভিং সিটে থাকা চালকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, কোথাও চালক-হেলপার হামলা কিংবা মামলার শিকার হয়েছেন, সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে; সবখানেই তার উপস্থিতি কিংবা তদবির থাকবেই। অল্পতে ধর্মঘট ডেকে যাত্রী জিম্মির সিদ্ধান্ত তার মুখ দিয়েই আসে। তবে সেই ফলিকের বিরুদ্ধে কেন হঠাৎ শ্রমিকরাই আন্দোলনে নামলেন?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কল্যাণ তহবিলে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ছিল। এর মধ্যে শ্রমিক ইউনিয়নের মালিকানাধীন চারটি লোকালবাসের দামও রয়েছে। তবে বাস ছাড়া কল্যাণ তহবিলে থাকার কথা ৬০ লাখ টাকা, কিন্তু আছে ৪১ লাখ ২১ হাজার টাকা। কিছুদিন আগে আবার সেই টাকা থেকেও ১৪ লাখ টাকা ঋণ নেন সভাপতি ফলিক। গত ২৫ মার্চ একটি চেকের মাধ্যমে তিনি অবশ্য ওই টাকা ফেরত দেন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ শামসুল হক মানিকের কাছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে মানিক তা ওই সময়ে তুলতে পারেননি। গত ৩১ মে উঠিয়ে সেই টাকা শ্রমিককল্যাণ ফান্ডে জমা রাখেন। এ দিকে লকডাউনের শেষ দিকে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফলিকের কাছে কিছু শ্রমিক ইউনিয়নের ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা চান। জবাবে ফলিক জানান, এটি তো আর কারও ব্যক্তিগত টাকা নয়। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দিতে হবে। এতেই ক্ষিপ্ত হন শ্রমিকদের একাংশ। তারা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতির বিরুদ্ধে ১৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেন।
একটি সূত্র আরও জানায়, শ্রমিক ইউনিয়নের চারটি বাস বিক্রির সিদ্ধান্ত হলে তা ৪৫ লাখ টাকায় কিনে নেন সভাপতি ফলিক। তিনটি চেকে তিনি সেই টাকা শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ শামসুল হক মানিকের কাছে হস্তান্তর করেন। তবে বাসের ৪৫ লাখ এবং তহবিলের ৪১ লাখ ২১ হাজার টাকার হিসাব মিললেও বাকি প্রায় ২০ লাখ টাকা গরমিল আছে বলে দাবি করেছেন আবদুল মুহিম ও ময়নুল। আর সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক ও কোষাধ্যক্ষ শামসুল হক মানিকের দাবি, অ্যাকাউন্টে ৪১ লাখ ২১ হাজার টাকা ছাড়া আর কোনো টাকা ছিল না। বাস বিক্রির টাকা জমা হবে ৩০ জুন।
সভাপতি ফলিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘কল্যাণ তহবিলের টাকা ২০০৩ সাল থেকে প্রত্যেক শাখা কমিটির অধীনে দেওয়া, যা ওইসব কমিটির শ্রমিকরা তাদের সুবিধা-অসুবিধায় ব্যয় করবেন। তাছাড়া কোনো শ্রমিক মারা গেলে জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের মৃত্যু ফান্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা করে পরিবারকে দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত নিহত ৭০ শ্রমিকের পরিবারকে ৩৫ লাখ টাকা দিয়েছি। এ টাকা বণ্টন করতে হলে পুরো জেলার সাধারণ শ্রমিকদের নিয়ে সাধারণ সভার মাধ্যমে আগের রেজুলেশন বিলুপ্ত করে নতুন রেজুলেশনে করতে হয়। তাই এ টাকা নিতে সাধারণ শ্রমিকরা রাজি নন। শুধু মিতালির কয়েকজন এ টাকার জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। আগামীতে আমি বেঁচে থাকলে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়ায় মূলত তারা এমনটা করেছেন। টাকা তছরুপের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে, সভাপতি হিসেবে আমি টাকা আত্মসাৎ করেছি তবে সব দায় আমার।