নিজস্ব প্রতিবেদক: কোভিড-১৯ এর প্রভাবে চলতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি আড়াই শতাংশের বেশি হবে না বলে ধারণা করছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
আগামী ৩০ জুন শেষ হতে চলা চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতি নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি তাদের বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে। তবে আড়াই শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনটিও শর্তসাপেক্ষ। জুলাইয়ে নতুন অর্থবছর শুরুর আগে লকডাউনের সরকারি ছুটির পরিমাণ না বাড়লে এবং চলতি জুনের বাকিটা সময় জনজীবন নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি না থাকলে অর্থবছর শেষে কেবল আলোচিত পরিমাণে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব।
বিদায়ী ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান এবং বাজেটের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ রোববার আয়োজিত এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ অভিমত দেয়া হয়। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রতিবেদন তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
সিপিডি জানায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি। শিল্প ও সেবা খাতে পড়েছে বিরূপ প্রভাব। এর ফলে বড় ধাক্কা লেগেছে জিডিপিতে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।
সিপিডি’র গবেষক তৌহিদুল ইসলাম খান বলেন, বিদায়ী অর্থবছরের শুরুটা ভালো ছিলো। কিন্তু শেষ প্রান্তিকে এসে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোতে নিম্নমুখী ধারা লক্ষ্য করছি। করোনা সংকটে দেশের সবচেয়ে বড় খাতগুলো অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রবৃদ্ধির নেতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে অথনৈতিক প্রবৃদ্ধির উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা চিন্তা না করে, বরং মানুষের জীবন মান রক্ষা ও উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার আহবান জানিয়ে সিপিডির এই গবেষক বলেন, সাধারণত আমাদের নীতি, পরিবেশ পরিস্থিতি যদি বিবেচনা করি দেখি, আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে বেগবান করার জন্য বড় গুরুত্ব থাকে। এটাই প্রধান বলে অনেক সময় অনেক নীতি-নির্ধারকরা বলে থাকেন। কিন্তু বর্তমান সময় অত্যন্ত ভিন্ন ধরনের সময়। এই সময়ে আমরা প্রবৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর না দিয়ে, বরং আমাদের মানুষের জীবন বাঁচানো সবচেয়ে বেশি প্রাধিকার দিতে হবে। প্রবৃদ্ধি অবশ্যই এবারের জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামক হতে পারে না।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সিপিডির অনারারি ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের নীতি-নির্ধারকদের অনেকে বলছেন- আমরা এ বছরের জন্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ৮ শতাংশ করেছিলাম। প্রথম নয় মাস অর্থনীতি খুব ভালো চলেছে। সুতরাং আমাদের ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতেই পারে। তবে আমাদের হিসাবে প্রবৃদ্ধি দুই থেকে আড়াই শতাংশের বেশি হবে না।
সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে এবারের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। এ অবস্থায় আমাদেও অবশ্যই প্রবৃদ্ধিও মোহ কাটিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখার যে নিয়ম চালু হয়েছে সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমাদেও হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো বাজেট ঘাটতি থাকবে। নতুন অর্থবছরে সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা না বাড়িয়ে কর ফাঁকি, অর্থপাচার বন্ধ করে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে আগামী কয়েক অর্থবছরের বাজেটের দিক নির্দেশনা থাকতে হবে।