ধর্ম ডেস্ক: আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করেছেন। পার্থিব জীবনে কে উত্তম ও সফল আল্লাহ তা যাচাই করতে চান। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই জমিনের ওপর যা রয়েছে, তা আমি সাজিয়েছি, যাতে পরীক্ষা করি যে কর্মে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ৭)। আল্লাহ আরও বলেছেন- ‘আল্লাহ ওই সত্তা, যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম।’ (সুরা মুলক, আয়াত : ২)। অতএব আমাদের যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য আমাদের শ্রম ও মেধা ব্যয় করা জরুরি, যেটাকে আমার সেবার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সেটার পেছনে আমাকে কেন ছুটতে হবে, সেটা তো আমার সেবার জন্য আমার কাছে আসবেই।
আল্লাহর হুকুম পালনেই সৌভাগ্য: পৃথিবীতে মুমিনের প্রধান কাজ হচ্ছে আল্লাহ সব হুকুম মেনে চলা। আল্লাহর হুকুম মেনে চলার ভেতরেই রয়েছে সৌভাগ্য ও সফলতা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাআদ, আয়াত : ২৮)। অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদের উত্তম প্রতিদান দেব।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৯৭)। অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয়ই এক সঙ্কুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাব অন্ধ অবস্থায়।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১২৪)। আর সব দুর্ভাগ্য হলো আল্লাহর হুকুম অমান্য করা, গুনাহ, কুফুর, শিরক, নিফাক ইত্যাদি। এটি দিবালোকের মতো আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে এ হায়াত শেষ হওয়ার পর। তখন আল্লাহর অবাধ্য লোকেরা হতাশ হয়ে বলতে থাকবে, ‘হায়! যদি আমি কিছু আগে পাঠাতাম আমার এ জীবনের জন্য।
অতঃপর সেদিন তাঁর আজাবের মতো আজাব কেউ দিতে পারবে না।’ (সুরা : ফজর, আয়াত : ২৪, ২৫)। কিন্তু এই হা-হুতাশ তার কোনো কাজে আসবে না। আর ঈমানদার বান্দার মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা তাকে বলবে, ‘হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি ফিরে এসো তোমার রবের প্রতি সন্তুষ্টচিত্তে, সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও। আর প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।’ (সুরা ফজর, আয়াত : ২৭-৩০)। মুমিন মৃত্যুর সময় তার সৃষ্টিকর্তার সাক্ষাতে আনন্দিত হবে। আর কাফির, মুনাফিক ও পাপিরা আল্লাহর সাক্ষাৎকে ভয় করবে। তাই আমাদের জন্য উচিত, আমরা যেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করি, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি, তাঁর ভালোবাসা পেতে পারি। আল্লাহ তায়ালা ওই লোকদের ভালোবাসেন যারা তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর যারা তাঁকে ভুলে অন্যদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাদের অপছন্দ করেন।
আল্লাহর স্মরণেই তৃপ্তি: আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) ‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করোনি। তুমি পবিত্র, মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)। আর শয়তানের পথ থেকে যেন আমরা সরে আসি। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বনি আদম, আমি কি তোমাদেরকে এ মর্মে নির্দেশ দিইনি যে তোমরা শয়তানের উপাসনা করো না। নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর আমারই ইবাদত করো। এটিই সরল পথ।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ৬০, ৬১)।
তাই আমরা দিন-রাত কথায়-কাজে শয়তানের বিরুদ্ধাচরণ করি। দিন-রাত নিজে আল্লাহকে স্মরণ করি এবং অন্যকেও আল্লাহর স্মরণ করিয়ে দিই। মানুষদের আল্লাহর স্মরণ করানো ও আল্লাহকে চেনানো বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। আর এতেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা আমাদের জাতশত্রু ইবলিস-শয়তানের বিরুদ্ধাচরণ করতে সক্ষম হব। এই ইবলিস আমাদের একবার জান্নাত থেকে বের করেছে। এখন সে আবার চাচ্ছে যেন আমরা আবার জান্নাতে ফিরতে না পারি। আর এই দ্বীন পরস্পরের কল্যাণকামিতা, দয়া ও সহানুভূতির দ্বীন। আমরা এই দ্বীনি সহানুভূতি ও কল্যাণকামিতাকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিই।
মুত্তাকিদের সাহচর্যে হেদায়েত: মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। সুতরাং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ ছাড়া অন্য কোনোভাবে মানুষের চলার উপায় নেই। আর আল্লাহর প্রদর্শিত পথকেই বলে হেদায়েত। হেদায়েত লাভের অন্যতম উপায় হচ্ছে নেককার ও আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্য অর্জন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১১৯)। আমরা তখনই প্রকৃত সত্যবাদী ও সৎকর্মশীল হতে পারব যখন সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকব। আমরা সর্বদা আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ করে শোকর আদায় করতে থাকব। আল্লাহ তায়ালা কীভাবে আমাকে অস্তিত্ব দান করলেন, এর সঙ্গে দয়া করে সব কিছু দান করলেন। তাই আমরা সর্বদা সচেষ্ট থাকব যে কীভাবে আমরা হেদায়েতের ওপর নিজে প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারি, নিজের পরিবার, প্রতিবেশী ও সব মানুষকে সঠিক পথে আনতে পারি। আল্লাহ তায়ালা তাওফিক দান করুন। আমিন।