‘আমি তো কষ্ট লাঘব করেছি কিন্তু যারা এভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষকে সেই কষ্টে আবার ফেলে দিলো, তাদের বিচার এ দেশের মানুষকেই করতে হবে। আমি খালি সকলের সহযোগিতা চাই। আর এইভাবে মায়ের কোল খালি হোক এটা আমি চাই না।
কোটা আন্দোলন চলাকালে সহিংসতার ঘটনা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা মনে হলো আর কিছুই না, আমাদের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে দিয়ে বাংলাদেশকে আবার ভিক্ষুকের জাতি করে দেওয়া। এটাই বোধ হয় এদের পেছনে ষড়যন্ত্র।
আজ শনিবার সকালে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের দেখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।সেখানে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত কয়েকজনের সঙ্গে তিনি কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।
সরকারের কাছে তারেক রহমানের হামলার নির্দেশনার অডিও : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীদের কমপ্লিট শাটডাউন, আর তার ফলাফল আজকে এই অবস্থা। সমস্ত দাবি মেনে নেওয়ার পরেও তাদের আর সেই শাটডাউন শেষ হয় না, কী কারণে আমি বুঝি না। আমরা তো সবগুলো দাবিই মেনে নিয়েছি। একটা মানলে আরেকটা, আরেকটা মানলে আরও একটা! আর এর ফল আজকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে সব একদিকে ছারখার, আর আজকে কত মানুষ জীবন হারাল! কতগুলো মানুষ পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে!
তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে এ রকম তাণ্ডব বিএনপি-জামায়াত জোট চালিয়েছিল। আওয়ামী লীগের প্রায় ২১ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করে। কত মানুষ গুলি খেয়ে…তাদের ঘর-বাড়ি…হাত-পা কেটে দেওয়া, চোখ তুলে নেওয়া, মেয়েদের রেইপ করা—এই তাণ্ডব ছিল। আবার ২০১৩ সালে অগ্নি সন্ত্রাস। ১৩, ১৪, ১৫ আগুন জ্বালানো। বাসের ভেতরে মানুষ, সেখানেও আগুন জ্বালানো। ২৩ সালে সেই তাণ্ডব আর প্রতিবারই পুলিশের ওপরে আঘাত। পুলিশকে হত্যা, মানুষ মেরে ঝুলিয়ে রাখা—পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রাখা। গাজীপুরে আমাদের কর্মী মেরে ঝুলিয়ে রাখা। এটা কী ধরনের রাজনীতি আমরা জানি না।’
তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য যা যা লাগবে আমরা করে দেবো, করে দিচ্ছি। আর যারা পা হারিয়েছে বা হাত হারিয়েছে, আমরা কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা করে দেবো যাতে তারা আবার সুস্থ মানুষের মতো চলতে পারে, নিজের কাজ করতে পারে। এর মধ্যে একজন আবার প্রতিবন্ধীও, কাজেই তার মা যাতে ভালোভাবে চলতে পারে; প্রতিবন্ধীদের অবশ্য আমরা ভাতাও দিচ্ছি কিন্তু তাকে আরও ব্যবস্থা করে দেবো। আমাদের যতটুকু সাধ্য করে দেবো।
‘কিন্তু আমার দেশবাসীর কাছে আমি বিচার চাই। অপরাধটা কী করেছি যে এইভাবে…যেখানে আমি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করেছি। সেই ২০০৮ এর বাংলাদেশ আর ২০১৪ এর বাংলাদেশ তো এক না! বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান তো উন্নত হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতি কত উপরে উঠে গিয়েছিল। এটা মনে হলো আর কিছুই না, আমাদের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ পঙ্গু করে দিয়ে বাংলাদেশকে আবার ভিক্ষুকের জাতি করে দেওয়া। এটাই বোধ হয় এদের পেছনে ষড়যন্ত্র। সেটাই হচ্ছে সব থেকে দুঃখজনক। দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাংলাদেশকে যখন একটা জায়গায় নিয়ে আসলাম, আজকে সেখানে দেখি একদিকে জ্বালাও-পোড়াও সব কিছু। ঠিক যে প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের সেবা দেয়, আজকে মেট্রোরেলে চড়ে মানুষ কত অল্প সময়ের মধ্যে সময় বাঁচিয়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারতো, আবার ফিরতে পারতো, সেখানে ছাত্ররা-চাকরিজীবী, সাধারণ মানুষ সবাই তো যেতে পারতো। সেই স্টেশনগুলো পুড়িয়ে এখন ট্রাফিক জ্যাম—মানুষের কষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘আমি তো কষ্ট লাঘব করেছি কিন্তু যারা এভাবে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষকে সেই কষ্টে আবার ফেলে দিলো, তাদের বিচার এ দেশের মানুষকেই করতে হবে। আমি খালি সকলের সহযোগিতা চাই। আর এইভাবে মায়ের কোল খালি হোক এটা আমি চাই না। কারণ আমি তো বাবা-মা সব হারিয়েছি, আমি তো জানি হারানো ব্যথা; কত কষ্ট! সেই কষ্ট বুকে নিয়েই তো ফিরে এসেছিলাম এ দেশের মানুষের জন্য। এখানে আমার তো কোনো চাওয়া-পাওয়া নাই।
‘আমি তো আমার ছেলে-মেয়ের জন্যই কিছু করিনি! শুধু তাদের লেখাপড়া। নিজেরাই চাকরি করেছে, নিজেরাই পড়েছে। আমি কতটুকু করতে পেরেছি! কিন্তু আমি দেশের মানুষের জন্য করেছি। আজকে অন্তত মানুষের ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, তাদের কাজের সংস্থান সবই তো করে দিচ্ছি আমি,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, ‘যখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেলাম, তখনই এই তাণ্ডব করে ঠিক যে জায়গাগুলো মানুষের সেবা করবে সেগুলোতেই আঘাত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হল ভেঙে দেওয়া, সব থেকে দুর্ভাগ্য ভিসির বাড়িতে আগুন দেওয়া। এর আগেও একবার ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভিসির বাড়িতে আগুন দিয়েছিল। রংপুরে আগুন দিয়েছে, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায়, রাজশাহীতে এই তাণ্ডব চালিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশন জট ছিল, আমি সরকারে আসার পর থেকে কোনো সেশন জট নাই। লেখা-পড়ার মান উন্নত করা, যাতে এখান থেকে পড়ে আবার বিদেশেও পড়তে পারে সেই ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। কিন্তু তার পরেও কোটা সংস্কার আন্দোলন। কোটা তো আমি বাতিলই করে দিয়েছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমি আহ্বান করেছিলাম, একটু ধৈর্য ধরো। হাইকোর্টে শুনানি হবে, হাইকোর্ট যে রায় দেয়। না, তারপরও এই আন্দোলন। আজকে এই যে এতগুলো মানুষের জীবনের ক্ষতি হলো, এতগুলো পরিবারের ক্ষতি হলো, এর দায়-দায়িত্ব কাদের?
‘আমি দেশবাসীর কাছে সেই আহ্বান জানাবো। এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ যেন এ দেশকে নিয়ে আর কেউ চালাতে না পারে। আমি সকলের সাহায্য চাই। আমি চাই না এভাবে মায়ের কোল খালি হোক। আর এভাবে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ুক,’ বলেন তিনি।