ওয়েব ডেস্ক: আদালতে আইনজীবীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রিমান্ড শুনানি শেষে এ কথা বলেন তিনি। হত্যাচেষ্টা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকীকে উদ্দেশ্য করে ব্যারিস্টার সুমন কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। এসময় সুমন বলেন, আপনার সঙ্গে আলাদা করে কিছু বলব না স্যার। আপনার মাধ্যমে সব আইনজীবীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি খুব সরি স্যার।
এদিন বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয় সুমনকে। এসময় তাকে হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে পুলিশের কড়া প্রহরায় তাকে আদালতে তোলা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মিরপুরে যুবদল নেতা ও বাঙালিয়ানা ভোজের সহকারী বাবুর্চি হৃদয় মিয়াকে হত্যাচেষ্টা মামলার শুনানির শুরুতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল হালিম অস্ত্র উদ্ধার ও আসামি শনাক্তকরণসহ সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তার ১০ দিনের রিমান্ড চান। ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান রিমান্ড নেওয়ার পক্ষে শুনানি করেন।
এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডে নেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে শুনানি করেন। তিনি আদালতকে বলেন, এই আসামি ৫ আগস্টের পর ফেসবুকে এমনভাবে ছবি ভিডিও শেয়ার করেন যাতে বোঝা যায় তিনি লন্ডনের কোথাও আছেন। তিনি লন্ডন যাননি, বরং মিরপুরে তার বোনের বাসায় পালিয়ে ছিলেন। কিছু মানুষ আছেন যারা কোনো রাজনীতি করেন না, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে ভেলকি দেখায়। এই আসামি তাদেরই একজন। তিনি নিজেকে সেলফি এমপি দাবি করেন। পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলেছেন। মানুষকে সহায়তার নামে বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমপি হয়ে তিনি দেশের সবচেয়ে দামি গাড়ি আমদানি করেছেন, তবে দুঃখের বিষয় সেটা ছাড়াতে পারেননি। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি রাস্তায় বসিয়ে ভিডিও করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। গ্রেপ্তারের আগেও তিনি ফেসবুকে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন আদালতে আসার কথা, যেন তিনি কি না কি উদ্ধার করে ফেলেছেন। এই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে আলাদা মামলা হওয়া দরকার। এসময় তিনি আসামি সুমনের সর্বোচ্চ রিমান্ড চান।
এরপর আসামিপক্ষে একজন আইনজীবী তার রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
পরে আবারও বিএনপিপন্থি কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করার একপর্যায়ে মহানগর পিপি তাদের কাছ থেকে মাইক কেড়ে নেন। আদালত আসামির কোনো বক্তব্য আছে কি না জানতে চাইলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের তোপের মুখে কথা বলতে রাজি হননি ব্যারিস্টার সুমন। এরপর আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দিয়ে এজলাস ত্যাগ করেন।
সুমনকে এজলাস থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় মহানগর পিপির উদ্দেশ্যে তিনি কথা বলেন।
এর আগে সোমবার (২১ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটের দিকে মিরপুর-৬ এলাকা থেকে ব্যারিস্টার সুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই হৃদয় জুমার নামাজ আদায় করে মিরপুর-১০ নম্বরে সমাবেশে যান। সেখানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। ককটেল নিক্ষেপ করে, গুলিও চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হন হৃদয়। তিনি হবিগঞ্জের মাধবপুর ১০ নং হাতিয়াইন ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি।
এ ঘটনায় তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি ব্যারিস্টার সুমন।