মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৯ অপরাহ্ন
							
							 
                    ওয়েব ডেস্ক: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য থাকতেই পারে, তবে তা যেন মতবিরোধে পরিণত না হয় সেজন্য সতর্ক করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সবাইকে নিয়েই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেখতে চাই।
এবার এককভাবে নয়, আরও অনেক দলকে ধারণ করে যথাসময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করা হবে বলেও জানান জামায়াত আমির।
সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ভোরে দেশে ফেরেন ডা. শফিকুর রহমান। পরে সকাল ৬টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
জামায়াতের আমির বলেন, গত মাসের ১৯ তারিখে ওমরার উদ্দেশে দেশত্যাগ করি। তিনদিনে ওমরাহ সম্পন্ন করে ২২ অক্টোবর আমেরিকা পৌঁছি। সেখানে ৮ দিন আমি সরকারি, বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছি। সেখানে বিপুলসংখ্যক বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। তাদের কথাগুলো শোনার সুযোগ হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করে এসেছি। বিশেষ করে একটি ম্যাসেজ দিয়েছি, বাংলাদেশ আমাদের সকলের। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও নিপীড়নের পর ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে দেশ মুক্তি পেয়েছে। সেখানে প্রবাসীদের লড়াইও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীদের ভোটের অধিকার আমরাই প্রথম তুলেছি, সেটা ছেড়ে দিইনি। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর ও নির্বাচন কমিশনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় আমরা কথা বলেছি।
‘সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ, এবারই প্রথম প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় ব্যাপকভিত্তিক সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। অক্টোবরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। যে সফটওয়্যার ইনস্টল করা হয়েছিল তা কাজ করেনি প্রপারলি। সংগত কারণে অনেকে আগ্রহ ও চেষ্টা সত্ত্বেও ভোটার হতে পারেননি।’
নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, কমপক্ষে আরও ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হোক। যে জটিলতাগুলো আছে তা সহজ করা হোক। যেসব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে তা শিথিল করা হোক। একজন নাগরিকের প্রমাণের জন্য তার এনআইডি যথেষ্ট। পাশাপাশি যদি একটা ভ্যালিড পাসপোর্ট থাকে তাহলে তো আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। এগুলো সহজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জাতীয় সংসদসহ সরকার পরিচালনা, দেশ গঠনে পিআর সিস্টেমেই প্রবাসীরা অংশগ্রহণ করবেন। হয়ত সময় লাগবে, তবে এটা নিশ্চিত করা হবে ইনশাআল্লাহ। এটা আমাদের স্বপ্ন।
‘আমেরিকা সফর শেষে যুক্তরাজ্য ও তুরস্ক সফর করে আজ দেশে ফিরেছি। দুনিয়ার সকলের সঙ্গেই আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমতার ভিত্তিতে সম্মানজনক সম্পর্ক চাই। আমরা যত জায়গায় গিয়েছি সকলের আগ্রহ সম্মান পেয়েছি।’
বিএনপি গতকাল দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা করেছেন, জামায়াত কবে করবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি যেটা করেছে সেটিও শুনলাম চূড়ান্ত নয়। ২৩৭টা আসনে তারা মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ করেছেন, তবে সেটি চূড়ান্ত নয় বলেছেন। এর মধ্যেও পরিবর্তন হতে পারে।
জামায়াতের মনোনয়ন প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এক বছর আগে আমরা আঞ্চলিকভাবে তালিকা জানিয়ে দিয়েছি। আমরা চূড়ান্ত তালিকা সময়মতো জানিয়ে দেব।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী একা নির্বাচন করব না, দেশ ও জাতির স্বার্থে আরও অনেককে আমরা ধারণ করব। সবদিক বিবেচনা করে যথাসময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নের চূড়ান্ত তালিকা জানিয়ে দেওয়া হবে।
লন্ডনে অবস্থানকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আপনার বৈঠকের কথা শোনা গেছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি শুনেছেন, আমি শুনিনি।
নানাভাবে এ ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য দেখা গেছে। এটি কেন? জানতে চাইলে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, মতানৈক্য হোক কিন্তু মতবিরোধ যাতে না হয়। মতের ভিন্নতা থাকবে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। আমরা সকলের মতকে শ্রদ্ধা করি। সব দলের তো ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এর মানে এই নয় যে, মতানৈক্যের কারণে বিরোধ বা অনৈক্যে দেশ অস্থির হয়ে গেছে, তা মানতে রাজি নই।
এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনা করে সরকারকে জানানোর আহ্বান প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, সরকার সময় বেঁধে দেননি, অনুরোধ করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলো বসে যদি একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে তাহলে তা সরকারের জন্য ভালো। আমরাই সবার আগেই আহ্বান জানিয়েছি, নায়েবে আমির তাহের খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে দেশ ও জাতির স্বার্থে সমাধানে পৌঁছার আহ্বান জানিয়েছেন। আশা করি অন্যরা এ আহ্বানে সাড়া দেবেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও মাওলানা আ.ন.ম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম, মাওলানা আব্দুল হালিম, রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাইফুল আলম খান মিলন, মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ কেন্দ্রীয় উত্তরার আঞ্চলিক জামায়াত নেতারা।