সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৯ অপরাহ্ন
ওয়েব ডেস্ক: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রেখেই সরকারকে চাপে রাখার কৌশলে সক্রিয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি রাজনৈতিক ঐকমত্যের লক্ষ্যে বিএনপিকে দায়িত্ব নিয়ে আলোচনার আহ্বান যেমন জানিয়েছে, তেমনি সরকারকেও রেফারির ভূমিকা নিতে বলেছে।
অন্যদিকে তিন দাবি— আইনি ভিত্তির মাধ্যমে জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের আলোকে অবিলম্বে জরুরি আদেশ জারি এবং জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের স্পষ্ট দলীয় অবস্থান জানান দিয়ে সরকারকে চাপে রাখার কৌশলে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের নিয়ে সক্রিয় রয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে গত ৩ নভেম্বর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার করে সম্ভাব্য দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রত্যক্ষ বা প্রকাশ্য আলোচনার বিষয়টি দেখা না গেলেও সরকারকে চাপে রাখার নীতির ধারাবাহিকতায় জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ সঙ্গীদের নিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। পাঁচ দফা গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে আসা যুগপৎ সঙ্গী আটটি রাজনৈতিক দল জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
১১ নভেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুর ২টায় ঐতিহাসিক পল্টন মোড়ে এ জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এমন কর্মসূচির মাধ্যমে আগাম আওয়াজ তুলে সরকারকে চাপে রেখে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
গত ৬ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘আজ স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দেওয়ার পরও যদি দাবি মানা না হয়, অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে ১১ নভেম্বর চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি। আগামী ১১ তারিখ ঢাকা মহানগরী হবে জনতার নগরী। লড়াই হবে।’
সরকারের পক্ষ থেকে আলাপ-আলোচনার আহ্বানের মধ্যে চাপে রাখার কর্মসূচি কেন— জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আলোচনার পথ খোলা। সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান জানানোর আগেই তো জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনা হবে। রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে যেমন সেটির দায়িত্ব নিতে আহ্বান জানানো হয়েছিল, তেমনি রেফারির ভূমিকায় সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আলোচনার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
মাওলানা আব্দুল হালিম আরও বলেন, রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতামূলক রূপরেখার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে রয়েছেন সংগঠনের নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ।
তিনি যোগ করেন, তারা নির্বাচনী কাঠামো, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের বিষয়ে একটি ‘সমঝোতামূলক রূপরেখা’ তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। এই কমিটি গঠন প্রমাণ করে দেশ ও জাতির স্বার্থে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারও যদি করতে হয়, সেজন্য আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে রাজনৈতিক সমঝোতায় বিশ্বাস করে জামায়াতে ইসলামী। তাই বলে রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করছি না। আলাপ চলবে, কর্মসূচিও চলবে।
১১ নভেম্বরের রাজনৈতিক কর্মসূচি সম্পর্কে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ সরকারের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার তিনটি– সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। সংস্কার হচ্ছে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একমাত্র প্রোডাকটিভ অ্যাচিভমেন্ট। বাকিগুলো তো অন্যান্য স্বাভাবিক সরকারের মতোই করছে। পুরো জাতির প্রত্যাশা যে সংস্কারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ নতুন দিগন্তে পদার্পণ করবে।
তিনি বলেন, কিন্তু আমরা ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের বেশকিছু বিষয়ে সরকারের গড়িমসি ও বিএনপির নোট অব ডিসেন্টের মারপ্যাঁচ দেখছি। সেজন্য আগামী ১১ নভেম্বর ঢাকায় আটটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে জনসভার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ জনসভা থেকে নতুন ও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
জামায়াতে ইসলামী সূত্রে জানা গেছে, রোববার (৯ নভেম্বর) বিকেলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের সভাপতিত্বে পাঁচ দফা গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনরত আটটি রাজনৈতিক দলের পূর্বঘোষিত ১১ নভেম্বরের ‘জনসভা’ বাস্তবায়ন কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম ও অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের নায়েবে আমির আবদুর রহমান মুসা, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আবদুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দিন মোল্লা ও ইয়াছিন আরাফাত, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম।
বৈঠকে জনসভা বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং জনসভা সফল করার লক্ষ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। জনসভা সর্বাত্মকভাবে সফল ও সার্বিক সহযোগিতার জন্য বৈঠক থেকে ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের এক সদস্য ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) পল্টনের কর্মসূচি মূলত সরকারকে চাপে রাখার লক্ষ্যে। সরকার যেন বিএনপির কোলে উঠে না পড়ে সেজন্যই। ১১ নভেম্বর পল্টনের কর্মসূচি জনসভা হলেও মহাসমাবেশ মনে করেই উপস্থিতি নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করছে আটটি রাজনৈতিক দল।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকার আমাদেরকে রাজনৈতিক ময়দানে ছেড়ে দিয়ে আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে, এটা দ্বিচারিতা। আমরা স্মারকলিপি দিয়ে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, কিছু দাবিদাওয়া উপস্থাপন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ আমরা নিতে দেখিনি। আলাপ-আলোচনা হতেই পারে কিন্তু রেফারির ভূমিকায় সরকারের থাকা উচিত।
তিনি বলেন, ১১ নভেম্বর আমরা ঢাকায় জনসভার মাধ্যমে সরকারকে এই বার্তায় দিতে চাই যে, আমাদের দাবি যৌক্তিক। গণভোটের আয়োজন এবং সেটার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজনই সমাধান।
খেলাফত মজলিশ মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সরকারের আলাপ-আলোচনা আহ্বান রয়েছে। কিন্তু আমরা সাড়া দেখছি না।
আলোচনার দায়িত্ব রাজনৈতিকভাবে কোনো না কোনো দলকে তো নেওয়া উচিত— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দলীয় ও যুগপৎ সঙ্গীদের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি। যাদের কারণে মূলত জাতীয় ও রাজনৈতিক ঐকমত্যে সমস্যা, তারা কিন্তু সাড়া দেননি। তাই আমরা রাজনৈতিকভাবেই বিষয়টি দেখছি, কর্মসূচি দিয়েছি যুগপৎ সঙ্গীরা মিলে। জনসভা থেকে সরকারের প্রতি জোরালো আহ্বান থাকবে– কমিশনে যা সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন হোক।