বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৬ অপরাহ্ন
ওয়েব ডেস্ক: আগুনে সর্বস্ব হারানোর পর পাশের একটি অক্ষত দোকানে বসে থাকা আইরিনের মুখে গভীর ট্রমার ছাপ। গালে হাত দিয়ে স্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা সেই চেহারা বলে দিচ্ছে রাতের ভয়াবহতা। চারদিকে পোড়া গন্ধ, ঘরবাড়ির ছাই আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছে তাকে।
পাশে সেলাই মেশিনের টেবিলে কাপড়ের থান দিয়ে বালিশ বানিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন আড়াই বছরের ছেলে আইমানকে। আগুনে চারটি কক্ষ ভস্মীভূত হওয়ার পর পরিবারটি এখন সম্পূর্ণ নিঃস্ব। আতঙ্কিত আইরিন বললেন, ‘এখন কোথায় যাবো? একটা কাপড়ও বাঁচাতে পারিনি। বাচ্চাটাকে কীভাবে আগলে রাখবো?
আইরিনের শ্বশুর আব্দুর রশিদ বলেন, আমি বাড়িতে ছিলাম না। যখন খবর পেলাম তখন আর ভেতরে ঢুকতে পারিনি। সকালে এসে দেখলাম, চারপাশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আমাদের ঘরের প্রতিটি জিনিস— টেবিল, আলমারি, বিছানার চাদর, কাপড়, এমনকি শিশু আইমানের খেলনা—সবই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সঞ্চয়, সংগ্রহ করা জিনিসপত্র সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি।
চোখের পলকেই আগুন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে জানিয়ে আব্দুর রশিদের প্রতিবেশি রাজিব হোসেন বলেন, চোখের পলকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে ছোট একটি আগুন দেখেছিলাম, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই পুরো ঘর লেলিহান শিখায় জড়িয়ে যায়। চারদিক ধোঁয়া আর আগুনে অন্ধকার হয়ে আসে। তখন আর কিছু বাঁচানোর মতো সময় ছিল না। প্রাণ বাঁচাতে সবাই কোনো রকমে বাইরে বেরিয়ে আসি। কেউই কল্পনা করতে পারেনি এত দ্রুত সব শেষ হয়ে যাবে। বাইরে এসে দাঁড়িয়ে শুধু আগুনে পুড়তে থাকা ঘর দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় এবং শুকনো মৌসুমের কারণে আগুন দ্রুত শতাধিক ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও, সরু পথ ও পানির অভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে মারাত্মক বেগ পেতে হয়। এলাকার লেক থেকে পাইপ টেনে এনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেন্টেনেন্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল রাতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বস্তিতে বিভিন্নভাবে কথা বলে আমরা জনাতে পেরেছি আনুমানিক ১৫০০ ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তদন্তের পর জানা যাবে আসলে কত ঘর-বাড়ি পুড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার ৩৫ মিনিট পর ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় তিনটি স্টেশনের ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট, ওইসময় সড়কে অনেক যানজট ছিল। এরপরে আরও ইউনিট এলেও বড় গাড়িগুলো ঢুকতে পারেনি সরু রাস্তার কারণে। অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হয়েছে তবে এখানে পৌঁছানোর আগেই আগুন ডেভলপ স্টেজে চলে যায়। এ আগুন নিয়ন্ত্রণে একটু বেশি সময় লেগেছে।