প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক: লাদাখের গালওয়ান উপত্যাকায় ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে উত্তপ্ত বিরাজ করছে। এই উত্তেজনার মধ্যে শুক্রবার লাদাখ সফর করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে নিয়োজিত সেনাদের উদ্দেশে বক্তৃতা করার পর জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় সিন্ধু নদে পূজাও দিয়েছেন মোদি।
শনিবার নরেন্দ্র মোদি তার ফেসবুক পেজে পূজা পালনের ছবি পোস্ট করে জানান, ‘গতকাল নিমুতে সিন্ধু পূজা করেছি। জাতির শান্তি, উন্নতি ও সমৃদ্ধি প্রার্থনা করেছি।’ ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, লাদাখের গালওয়ানে চীনের সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার কয়েক দিন পরেই মোদির একদিনের এ সফর। সফরের ফাঁকে নিমু এলাকায় সিন্ধু দর্শনে গিয়ে পূজা দেন মোদি। জানা যায়, সিন্ধু নদের পাড়ের ঐতিহাসিক সভ্যতার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে সিন্ধু দর্শন উৎসব হয়ে থাকে। তিন দিনের উৎসবে সিন্ধু নদকে ঐক্য, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
পূজা দেওয়ার আগে সেনাদের উদ্দেশে বক্তৃতায় মোদি চীনের নাম উল্লেখ না করে বলেন, বিস্তারবাদের যুগ শেষ, এটি উন্নয়নের যুগ। ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে যে বিস্তারবাদী শক্তিগুলি হয় হেরে গেছে নয়তো ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। ভারতীয় সেনাদের ‘বীর ভূমিপুত্র’ হিসাবে বর্ণনা করে মোদি আরো বলেন, ‘দুর্বলরা কখনই শান্তি পেতে পারে না, সাহসীরাই পারে।’ লাদাখে ভারতের যে রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ততা সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রাস্তা ও সেতু নির্মাণ বন্ধ করবে না।
লাদাখে আরও এক ডিভিশন সেনা মোতায়েন ভারতের: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আচমকা সফরের পর শুক্রবার লাদাখে সেনা সমাবেশ আরও বাড়িয়েছে ভারত। সূত্রের বরাতে সে দেশের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সবমিলিয়ে পূর্ব লাদাখে এই মুহূর্তে ভারতের সেনা সমাবেশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার ডিভিশনে। প্রতি ডিভিশনে সাধারণত ১৫ থেকে ২০ হাজার সৈন্য থাকে। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, লাদাখে মে মাসের আগে মাত্র এক ডিভিশন সেনা ছিল। এখন সেখানে চার ডিভিশন মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজারের কাছাকাছি ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে। সূত্রের বরাতে তারা বলছে, নতুন ডিভিশন এসেছে উত্তর প্রদেশ থেকে। শুধু সেনা সমাবেশ নয়, সেইসঙ্গে সমরাস্ত্র, যুদ্ধের সরঞ্জামও বাড়ছে।
আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ভারতের অতিরিক্ত সেনা: এবার আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নিরাপত্তা নিয়েও নড়েচড়ে বসেছে ভারত। ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে আন্দামান-নিকোবরের কাছ দিয়ে জ্বালানি তেল আমদানি করে চীন। সেই বিষয়টি মাথা রেখেই এখন আন্দামান-নিকোবর কমান্ডের গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ওই দ্বীপপুঞ্জে ভারত অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে এই সময়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, চীনের ‘সম্প্রসারণবাদ কৌশল’ মোকাবেলায় ভারত মহাসাগরের ওপর আন্দামান-নিকোবরের অবস্থান দিল্লির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আন্দামান-নিকোবরের প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কৌশলগত ভুল ধারণা এড়িয়ে চলার আহবান চীনের: চীন সম্পর্কে দিল্লির কৌশলগত ভুল ধারণা এড়িয়ে চলা উচিত বলে জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান। একইসঙ্গে চীন জানিয়েছে, সেনা ও কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মেটানো উচিত। তিনি বলেন, ‘ভারত-চীন সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি উভয় দেশের জন্যই জরুরি ও তা বজায় রাখার আহ্বান জানাই। উভয় দেশের স্বার্থ ও দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই ভারত-চীনের কাজ করা উচিত।’ মোদি সরকারের চীনা অ্যাপে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ঝাও লিজিয়ান বলেছেন, ‘ভারত-চীন সমঝোতায় দু’দেশের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। কৃত্রিমভাবে তার উপর বাধা সৃষ্টি করলে তা শুধু বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধি ভঙ্গই করবে না, একইসঙ্গে ভারতীয় স্বার্থের পক্ষেও ক্ষতিকারক হবে। ঝাও লিজিয়ান বলেন, সেনা ও কূটনীতিক আলোচনার মাধ্যমেই দু’দেশের রাষ্ট্রনেতার সাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে সমস্যা দূর হতে পারে। এজন্য ভারত-চীন উভয়কেই কার্যকরী পদক্ষেপ করতে হবে।
সূত্র: এনডিটিভি