সাভার সংবাদদাতা: সাভারের আশুলিয়ায় অবৈধ গ্যাসের লাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মা-বাবা ও শিশু সন্তানসহ একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার পর বিষয়টি ধামাচাপা দেন বাড়ির মালিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
বুধবার (০৮ জুলাই) দুপুরে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেন মৃতদের স্বজন আজিজুল ইসলাম। এর আগে শনিবার (০৪ জুলাই) ভোরে আশুলিয়ার দুর্গাপুর পূর্বচালা এলাকায় শহীদ হাজির মালিকানাধীন দোতলা বাড়ির নিচতলায় এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
মৃতরা হলেন- আবুল কাশেম (২৮), তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম (২২) ও তাদের ছয় বছরের মাদরাসাপড়ুয়া সন্তান আল-আমিন। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডিপাশা গ্রামে। আবুল কাশেম কন্টিনেন্টাল নামে স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তার স্ত্রী একই এলাকার সাউদার্ন নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন।
মৃতদের প্রতিবেশী অটোচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, তিন মাস আগে আবুল কাশেম পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার দুর্গাপুর এলাকায় শহীদ হাজির দোতলা বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষ ভাড়া নেন। তারা উভয়ে কারখানায় কাজ করতেন। শনিবার (০৪ জুলাই) ভোরে কারখানায় যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে ওঠেন তারা। এ সময় রান্নাঘরে আগুন জ্বালালে বিস্ফোরণ ঘটে। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় আবুল কাশেম, ফাতেমা ও আল-আমিনকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
মৃত কাশেমের মামা আজিজুল ইসলাম বলেন, ভাগনে কাশেমসহ তার পুরো পরিবার অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। রোববার (০৫ জুলাই) রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কাশেমের সন্তান আল-আমিন মারা যায়। পরদিন এনাম মেডিকেলে চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব নয় চিন্তা করে কাশেম ও তার স্ত্রীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার পথে কাশেমের মৃত্যু হয়। পরে ফাতেমার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার (০৭ জুলাই) বিকেল ৪টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারও মৃত্যু হয়।
এদিকে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটলেও বাড়ির মালিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেন। ঘটনার তিনদিন পর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে প্রভাবশালীদের ভয়ে এ নিয়ে মুখ খোলেননি কেউ।
আশুলিয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সামিউল ইসলাম বলেন, বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। এর আগে ঘটনার দিন বিষয়টি জানানো হয়নি। প্রাথমিক তদন্তে গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনার বিষয়টি জানা গেলেও অধিকতর তদন্ত ছাড়া নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।