নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রসহ দেশের ১৪টি বেতার কেন্দ্রে স্থানীয় সংবাদসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান প্রচার প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে করোনার এই দুর্যোগের সময় একদিকে স্থানীয় খবর শুনতে পারছেন না এ অঞ্চলের লাখো শ্রোতা, অন্যদিকে কোনও অনুষ্ঠান প্রচার না করায় শিল্পী, নাট্যকার, কথকসহ শিল্পীরা কর্মহীন সময় কাটাচ্ছেন, অনেকে পড়েছেন অর্থকষ্টে।
বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক ড. হারুনর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ‘করোনার দুর্যোগ শুরু হওয়ার পর এপ্রিল থেকে রংপুরসহ দেশের ১৪টি বেতার কেন্দ্রে সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ বেতারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।’
বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনার কারণে যেখানে মানুষকে সচেতন করা ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার বিষয়টি বেশি বেশি করে প্রচার করা দরকার, সেখানে বেতারের মতো গণমাধ্যমে স্থানীয় কেন্দ্রগুলো থেকে সব খবর বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়। বিষয়টি সম্পর্কে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনেকেই জানেন না বলেও তিনি দাবি করেন।
বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন চারবার স্থানীয় সংবাদ প্রচার করা হতো। এর মধ্যে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে, বেলা ১২টা ১০ মিনিটে, দুপুর ২টা ৫ মিনিটে এবং সন্ধ্যা ৭টায়। রংপুর অঞ্চলের লাখো শ্রোতা বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের মাধ্যমে রেডিও মারফত স্থানীয় খবরগুলো শুনতেন। এসব খবর ও স্থানীয় শিল্পীদের অনুষ্ঠান গ্রামাঞ্চলে জনপ্রিয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, টক শোসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান সরাসরি অথবা রেকর্ড করে রেখে প্রচারিত হতো। রংপুর অঞ্চলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এছাড়া আঞ্চলিক ভাষায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিকশিত হচ্ছিল।
একইভাবে রংপুর ছাড়াও ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, রাঙামাটি, বান্দরবান, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ বেতার কেন্দ্রে একইভাবে স্থানীয় সংবাদসহ স্ব স্ব অঞ্চলের কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক এতিহ্যকে লালন করা হতো। তবে কোনও কারণ ছাড়াই স্থানীয় সংবাদসহ সব অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক শিল্পী ও কলাকুশলী বেকার হয়ে পড়েছেন। করোনার এই পরিস্থিতিতে অর্থ সংকটে পড়েছেন তাদের অনেকেই।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও বেতার কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক এএসএম জাহিদের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঢাকার নির্দেশে স্থানীয় সংবাদ প্রচার আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে কিছু অনুষ্ঠান সীমিত আকারে প্রচারিত হচ্ছে। ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বেতারে জাতীয় সংবাদ রিলের মাধ্যমে এ অঞ্চলে সম্প্রচার করা হচ্ছে।
অপরদিকে বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মো. হারুনর রশীদ বলেন, ‘আমরা মাত্র দুই ঘণ্টা কিছু অনুষ্ঠান প্রচার করি। পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। রংপুর বেতার কেন্দ্রে আপাতত যেসব শিল্পী গান পরিবেশন করতে চান, তাদের আমন্ত্রণ জানাবো আসার জন্য। তাদের গান রেকর্ড করে প্রচার করবো।’ তবে স্থানীয় খবর প্রচার করার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানাতে পারেননি।
এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রচার) মিজান উল আলম বলেন, ‘অনুষ্ঠান বন্ধ কিনা তা আমার জানা নাই। বিষয়টি আমি জানি না। আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম।’ পরবর্তী সময়ে তিনি বেতারের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানান, করোনার কারণে নিয়মিত অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রগুলো বেশিরভাগ সময়ই ঢাকা কেন্দ্র থেকে রিলে করে অনুষ্ঠান শোনায় এবং স্থানীয়ভাবে মাত্র দুই ঘণ্টা করে প্রোগ্রাম চালায়।