বৃহস্পতিবার সিলেট নগরীর জামিয়া মাহমদিয়া ইসলামিয়া সোবহানীঘাট মাদ্রাসা মিলনায়তনে সম্মিলিত উলামা পরিষদ সিলেটের সভাপতি দরগাহ মাদ্রাসার মুহতামীম শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী মুহিব্বুল হক গাছবাড়ীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মুসল্লিদের সংখ্যা নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা ছাড়া মসজিদ উম্মুক্ত করে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্বজুড়ে ছড়ানো মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে বিশ্বের ছোট বড় কোন দেশই মুক্ত নয়। আমাদের বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে সরকারের পক্ষ থেকে এই মহামারী থেকে দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে অনেক পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়েছে, যা প্রশংসার দাবি রাখে। যেহেতু পুরো বিশ্বব্যাপি এ ব্যাপারে একমত যে এই মহামারী আল্লাহর সৃষ্ট তাই সরকারের সতর্কতার পূর্বেই আমাদের মুসলমানদের করণীয় হল আল্লাহর কাছে ক্ষমা, ইস্তেগফার, তওবা ও তাঁর ইবাদাত বন্দেগীর মাধ্যমে তাঁর কাছে আত্বসমর্পণ করা।
অপরদিকে শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুল মালিক মোবারকপুরী বলেন! ইবাদাতের মধ্যে সর্বোত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হল নামাজ কোরআন তেলাওয়াত দোয়া ইস্তেগফার, তওবা ও জিকির আজগার এবং এই সব ইবাদাতের জন্যই আল্লাহ্ তাঁর ঘর বায়তুল্লাহ নির্মাণ করেছিলেন। গোটা পৃথিবীতে সব মসজিদই তাঁর ইবাদাতের উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছে। অপরিদকে মসজিদ আবাদ রাখার নির্দেশসহ আল্লাহ্ ইরশাদ করেন- ‘যারা মসজিদে আসতে মানুষকে বাঁধা দেয় তাদের থেকে বড় জালিম আর কে হতে পারে?’
এই বাঁধা দেয়া অনেকভাবে হতে পারে যেমন-
(১) মসজিদে আসতে সরাসরি বাঁধা দান
(২) মসজিদ ধ্বংস করে বাঁধা দান
(৩) নামাজির সংখ্যা কমিয়ে বাঁধা দানসহ উল্লেখিত সব পদ্ধতিই মসজিদে আসতে বারন করার নামান্তর বলে বিশ্ববিখ্যাত মুফতিয়ানদের মতামত।
অন্যদিকে যারা অসুখ বা মহামারীতে আক্রান্ত বা আতঙ্কিত তাদের জন্য মসজিদে না আসার অনুমতি শরীয়তে রয়েছে।
আজকের সম্মিলিত উলামায়ে কেরামের বৈঠকে নিম্নবর্ণিত বিষয়াবলীর প্রতি লক্ষ রেখে মসজিদ উন্মুক্ত করে দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবী জানানো হয়।এবং নিম্নবর্ণিত বিষয়াবলীর প্রতি অনুসরণ করার জন্য মুসল্লীদেরকে বিশেষ অনুরুদ করা হচ্ছে যেমন
(১)সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতামুলক ব্যবস্হা মেনে মসজিদ সমুহ খোলা রেখে জামাতের সাথে পাচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুম্মা জারী রাখুন।পাচজন বা দশজনের বাধ্যবাধকতার শর্ত রহিত করুন।
(২)অসুস্থ, ভাইরাসে আক্রান্ত বা তাদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা মসজিদে আসার প্রয়োজন নাই।ঘরে নামাজ পড়লেই জামাতের সওয়াব পাওয়া যাবে।
(৩)বয়স্করা মসজিদে আসার ক্ষেত্রে নিজেকে অপারগ মনে করবেন।
(৪)মসজিদের দরজায় সাধ্যমত সেনিটাইজার লাগানোর ব্যবস্হা করুন।
(৫)গুরুত্বের সাথে দুই কাতারের মাঝখানে এক কাতার পরিমাণ ফাঁকা রাখুন।
(৬)সবাই ঘর হতে ওজু করে সুন্নত আদায় করে আসুন এবং পরবর্তী সুন্নতও ঘরে গিয়ে পড়ুন।
(৭)মুক্তাদীরা গুরুত্বের সাথে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে যথাসম্ভব মাস্ক পরে মসজিদে আসুন।
(৮)জুমার পূর্বে বয়ান না করে প্রয়োজনে সংক্ষিপ্তাকারে সতর্কতামুলক বয়ান করুন।এবং খুতবা ও দূআ সংক্ষিপ্ত করুন।
(৯)জামাতের পর ভিড় না করে সবাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বাড়ি ফিরুন।
(১০)করোণা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির কাফন দাফন স্বাস্হ্যবিধি রক্ষা করে শরীয়তসম্মত পন্হায় করুন।
(১১)বর্তমান পরিস্তিতিতে অসহায় দুস্থ গরীব ও মধ্যবিত্তদেরকে সমাজের বিত্তবানদের সাধ্যমত এগিয়ে আসার জন্য অনুরুদ করা হচ্ছে।
পাশাপাশি সরকার কর্তৃক সার্বিক নিরাপত্তা প্রচেষ্টায় নিয়োজিত সেনাবাহিনী পুলিশবাহিনী ও স্বাস্হ্যকর্মীদের নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালন সত্যিই প্রশংসনীয়। এজন্য নেতৃবৃন্দ সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এবং সদ্য করোণা আক্রান্ত সিলেটের প্রথম ব্যক্তি মানবতাবাদী চিকিৎসক ডাক্তার মঈনুদ্দীনের রুহের মাগফিরাতসহ জান্নাতের উচু মাক্বাম কামনা করেন নেতৃবৃন্দ।বৈঠকে উপস্হিত ছিলেন শায়খুল হাদিস মুফতি মাওলানা মুহিবুল হক গাছবাড়ি, শায়খুল হাদিস
মাওলানা আব্দুল মালিক মোবারকপুরী, হযরত মাওলানা এডভোকেট আব্দুর রকীব (সভাপতি- নেজামে ইসলাম পার্টি), হযরত মাওলানা রেজাউল করীম জালালী,মাওলানা মুস্তাক আহমদ খান, হযরত মাওলানা আহমদ কবীর বিন আমকুনী (মুহতামিম- সোবহানীঘাট মাদরাসা), হযরত মাওলানা আবু সালেহ কুতুবুল আলম,ভাইস প্রিন্সিপাল সোবহানীঘাট ডি ওয়াই কামিল মাদ্রাসা, হযরত মাওলানা খলিলুর রহমান,হযরত মাওলানা আব্দুল মালিক চৌধুরী, হযরত মাওলানা তাজুল ইসলাম হাসান, হযরত মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান,মাওলানা গাজী রহমাতুল্লাহ,মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী,হযরত মাওলানা আব্দুল মুছাব্বির জামডহরী,মুফতী নুরুল হুদা,মুফতী আব্দুর রহমান শাহজাহান,হযরত মাওলানা সৈয়দ মুতাহির আলী,হযরত মাওলানা হাফিজ আহমদ সগীর বিন আমকুনী (নায়েবে মুহতামিম- সোবহানীঘাট মাদরাসা) হাফিজ জিয়াউর রহমান,কায়সান মাহমুদ আকবরী,হাফিজ আতাউর রহমান,মাওলানা আব্দুল জব্বার শামীম,মাওলানা আলীম উদ্দিন প্রমুখ।