প্রত্যয় ডেস্ক: মৃদু করোনায় আক্রান্তদের শরীরের অ্যান্টিবডি পুনরায় ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়া থেকে দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষা না-ও দিতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানীদের নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তথাকথিত হার্ড-ইমিউনিটি ও ভ্যাকসিনের স্থায়িত্ব সম্পর্কেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রসিদ্ধ সাময়িকী নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, মৃদু উপসর্গ থেকে সেরে উঠা ৩৪ জন করোনা রোগীর রক্ত থেকে অ্যান্টিবডি নেয়া হয়েছিল। এই রোগীদের আইসিইউ’তে নেয়ার দরকার হয়নি। কেবলমাত্র দু’জনকে অক্সিজেন ও এইচআইভি’র ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। কোনও রোগীকে ভেন্টিলেটর কিংবা মার্কিন কোম্পানি গিলিয়াড সায়েন্সেসের তৈরি রেমিডিসিভির দেয়া হয়নি।
আক্রান্তদের উপসর্গ দেখা দেয়ার ৩৭ দিন পর অ্যান্টিবডি নিয়ে প্রথম বিশ্লেষণ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্লেষণ করা হয় ৮৬ দিন বা তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে। গবেষকরা দেখতে পান, আক্রান্তদের অ্যান্টিবডির মাত্রা দুই পর্যায়ের মাঝে দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। ৭৩ দিন বা তার কম সময়ের মধ্যে এই অ্যান্টিবডি কমে গেছে। সার্স ভাইরাসে আক্রান্তদের চেয়ে কোভিডে সংক্রমিতদের অ্যান্টিবডি দ্রুত হ্রাস পায়।
অ্যান্টিবডি কতটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে; সেটি বোঝার জন্য বিশ্বজুড়ে গবেষকরা নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। এসব গবেষণায় করোনা আক্রান্তদের পুনরায় ব্যাপক পরিসরে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে খুব কমই তথ্য পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। সর্বশেষ গবেষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যে, মৃদু সংক্রমিতদের অ্যান্টিবডি ভাইরাসটিতে পুনরায় আক্রান্ত হওয়া থেকে দীর্ঘসময় সুরক্ষা নাও দিতে পারে; যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘটছে।
এফ. জেভিয়ার ইবাররোনডো নেতৃত্বাধীন লস অ্যাঞ্জেলসের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার ডেভিড জিফেন স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকরা বলছেন, ৯০ দিন পরবর্তী সময়ে কতটা সুরক্ষা দিতে পারছে এবং কি হারে অ্যান্টিভাইরাল অ্যান্টিবডি কমে যাচ্ছে সেটি জানার জন্য আরও গবেষণা দরকার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংক্রমণ প্রতিরোধে অ্যান্টিবডির সুরক্ষামূলক ভূমিকা পুরোপুরি বোঝা না গেলেও সাধারণত যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তারা সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষার কিছুটা ভালো উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।
লন্ডনের কিংস কলেজের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তিন মাসের মধ্যে অ্যান্টিবডি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় কমে যেতে পারে। তবে কোভিড-১৯ এ পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার বিরুদ্ধে টি-সেলসহ অন্যান্য ইমিউনিটি ব্যবস্থাকে জাগিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে শরীর। গত মঙ্গলবার সুইডেনের শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, অ্যান্টিবডি তৈরি হোক বা না হোক, একবার আক্রান্ত হলে শরীরে অন্তত ৬ মাসের মতো ইমিউনিটি ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। নতুন নির্দেশনায় দেশটির পাবলিক হেলথ এজেন্সি বলছে, যারা একবার আক্রান্ত হয়েছেন তারা প্রত্যেকে এখন নিরাপদ বলে বিবেচিত হবেন।