প্রত্যয় ডেস্ক: দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২১ জন। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। জেলাভিত্তিক খবর:-
ময়মনসিংহ : জেলার মুক্তাগাছায় বাস ও সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে সিএনজির সাত যাত্রী নিহত হয়েছে। শনিবার বিকাল ৪টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী ও কন্যাসহ একই পরিবারের তিনজন রয়েছে। স্থানীয়রা বাস ও চালক কামাল হোসেনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। দুর্ঘটনায় সিএনজি অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।
নিহতরা হলো- মুক্তাগাছা উপজেলার শ্রীরামবাড়ির সিএনজিচালক আলাদুল (৩৮), মলাজানি গ্রামের নজরুল ইসলাম (৩৫), টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের নূর ইসলাম (৩০), তার স্ত্রী তাসলিমা (২৬) ও কন্যা লিজা (১৩) এবং দুজন অজ্ঞাত। মুক্তাগাছা থানার ওসি বিল্পব কুমার বিশ্বাস জানান, মুক্তাগাছা-জামালপুর সড়কের মানকোন নামক স্থানে জামালপুরগামী রাজিব পরিবহনের একটি বাস শনিবার বিকাল চারটার দিকে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই সিএনজির চার যাত্রী মারা যায়। গুরুতর আহত ৩ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তারাও মারা যায়।
চুয়াডাঙ্গা : জেলার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারে চট্টগ্রাম ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী নৈশকোচের ধাক্কায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরও চারজন। আহত চারজনের মধ্যে দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা আছে। পুলিশ গাড়ির চালককে আটক করেছে। বাসটি জব্দ করে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে।
আটক চালক আসাদুল আলম চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ফার্মপাড়ার আব্দুল ওহাবের ছেলে। নিহতরা হলেনÑ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভান্ডাদুয়া গ্রামের নিতাই হালদারের ছেলে ষষ্টি হালদার (৪০), খাড়াগুদা গ্রামের মাহতাব উদ্দীনের ছেলে মিলন হোসেন (৩০), তিতুদহ গ্রামের পিয়াস আলীর ছেলে রাজু আহমেদ (৩৫), একই গ্রামের লুতা মলের ছেলে সোহাগ হোসেন (২৮), হায়দার আলীর ছেলে কালু মÐল (৪০) এবং রহিম মলের ছেলে শরিফ হোসেন (৪০)।
জানা যায়, যাত্রীবাহী নৈশকোচ রয়েল এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। শনিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজারে পৌঁছুলে যাত্রীবাহী নৈশকোচটি প্রথমে একটি আলম সাধুকে ধাক্কা দেয়। এর পর পর্যায়ক্রমে পাখিভ্যান, মোটরসাইকেল ও আরও একটি আলমসাধুসহ সাতজন পথচারীকে ধাক্কা দেয়। সরোজগঞ্জ বাজার থেকে মিতালী সিনেমা হল পর্যন্ত আধা কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয় এবং চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া পরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ : বালুবোঝাই ড্রাম ট্রাক ও যাত্রীবাহী সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছে। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার ডহরগাঁও এলাকার রূপগঞ্জ-আড়াইহাজার সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার চরশিথিলপুর এলাকার সেলিম মাতবরের ছেলে সিএনজিচালক নাসির মাতবর (২৬) এবং আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচগাঁও চরপাড়া এলাকার সাঈদ মিয়ার ছেলে ওয়াজিদ (১৪)। ভুলতা ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক পরিমল সূত্রধর বলেন, উপজেলার সাওঘাট সিএনজি স্টেশন থেকে রূপগঞ্জ-আড়াইহাজার সড়কে যাত্রীবাহী সিএনজি আড়াইহাজারের দিকে যাচ্ছিল। সিএনজিটি ডহরগাঁও পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা বালুবোঝাই একটি ড্রাম ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
ঢাকা : যাত্রাবাড়ী থানার শনির আখড়ায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পারভেজ (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাত ৩টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ বলছে, বেপরোয়া গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নিহত হন পারভেজ। নিহতের ছোট ভাই সাব্বির আহমেদ জানান, স্ত্রী ও এক ছেলেসহ কাজলা ব্রিজ স্কুল গলি এলাকায় তাদের বাড়ি। তাদের বাবার নাম হাসান। পারভেজ করোনা শুরু হওয়ার আগে পিকআপ ভ্যান চালাতেন।
মাসখানেক ধরে মোটরসাইকেলে যাত্রী আনা নেওয়া করে। শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ থেকে শনির আখড়ার বাসায় ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। যাত্রবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কেএম আজিজুল হক জানান, শুক্রবার গভীর রাতে বেপরোয়া গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে ৩টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত মাহেন্দ্র ও নসিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষে আব্দুর রাজ্জাক (৬০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শিশুসহ আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে আরও ১০-১৫ জন। শনিবার দুপুরে আঞ্চলিক সড়কের কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগরের কালুমোড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি জেলার খোকসা উপজেলার হেলালপুর গ্রামের মৃত মোবারক শেখের ছেলে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কুষ্টিয়ার অভিমুখে মাহেন্দ্র যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময় উল্টো দিক থেকে ধেয়ে আসা নসিমনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় মাহেন্দ্রতে থাকা যাত্রীদের মধ্যে ছোট শিশুসহ ১০-১৫ জন আহত হলে তাদের কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে আহত আব্দুর রাজ্জাকের অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ঠাকুরগাঁও : পীরগঞ্জে পাওয়ার ট্রলি ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে আজহারুল ইসলাম (১৭) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও দুজন। শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার পীরগঞ্জ-চন্দরিয়া পাকা সড়কে রনশিয়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আজহারুল বৃদ্ধিগাঁও গ্রামের শাহাদাত হোসেনের ছেলে। আহতরা হলেন- চন্দরিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সাখায়াত হোসেন (১৭) ও একই গ্রামের জিয়াউরের ছেলে মিলন (১৭)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : জেলার আখাউড়ায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সাজু মিয়া (৬০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের রুটি গ্রামে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সাজু মিয়া জেলার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের মরহুম তারা মিয়ার ছেলে। তিনি তার পরিবার পরিজন নিয়ে রুটি গ্রামের শ^শুরবাড়িতে বসবাস করতেন। এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, সাজু মিয়া বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দিলে আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।