নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘরহীন মানুষের ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাঠ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সংগ্রহ করা তথ্য মতে দেশে বর্তমানে আট লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি পরিবার ঘরহীন রয়েছে। এর মধ্যে জমি আছে, কিন্তু ঘর নেই—এমন পরিবার রয়েছে পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫০টি। ঘর ও জমি দুটিই নেই দুই লাখ ৯২ হাজার ২৮৩টি পরিবারের। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যাদের ঘর নেই তাদের ঘর দেওয়া হবে; আর যাদের জমি ও ঘর দুটিই নেই তাদের জমি কিনে বা খাসজমি বন্দোবস্ত দিয়ে ঘর করে দেওয়া হবে। গড়ে প্রতি পরিবারে পাঁচজন হিসাব করলে সরকারের এই উদ্যোগে মাথার ওপর ছাদ মিলবে ৪৪ লাখ ১০ হাজার মানুষের। মুজিববর্ষকে কেন্দ্র করে এটি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ।
ঘরহীন মানুষের ঘর করে দিতে সরকারের তিনটি উদ্যোগ চালু রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প, ভূমি মন্ত্রণালয়ের গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ সহনীয় ঘর প্রকল্পকে একত্র করে এই উদ্যোগ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এর মধ্যে আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে যাদের জমি ও ঘর নেই তাদের জমিসহ ঘর করে দেওয়া হবে। আর দুর্যোগ সহনীয় প্রকল্পের মাধ্যমে যাদের জমি আছে তাদের ঘর করে দেওয়া হবে। গত রবিবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে এসংক্রান্ত উপকমিটি একটি বৈঠক করেছে। শিগগিরই এ বিষয়ে গঠিত মূল কমিটির আহ্বায়ক ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে আরেকটি বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ঘর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘এ উদ্যোগটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তদারকিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে উপকারভোগী চিহ্নিত করা হয়েছে। আশা করছি আগামী মাস থেকে ঘর করার কাজ শুরু করা যাবে।’
গরিব মানুষের জন্য ঘর নির্মাণে যেন কোনো ধরনের গাফিলতি না হয় সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরাসরি কাজটি হচ্ছে। প্রতিটি ঘরের সামনের দিকে পাঁচ ফুটের একটি বারান্দা থাকবে, দুটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট থাকবে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। ঘরের ওপরে থাকবে টিনের ছাউনি। বেড়া ও ফ্লোর হবে ইটের।
গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের এই প্রকল্পে বেসরকারি উদ্যোক্তারাও অংশ নিতে পারবেন। পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এ কাজে যুক্ত হতে আহ্বান জানানো হবে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প গ্রুপ, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা যদি এই প্রকল্পে অংশ নিতে চায় তাহলে সরকার নির্ধারিত খরচ ও নকশায় সরকারি সহযোগিতায় বা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ঘর করে দিতে পারবে। সরকারি-বেসরকারি যে উদ্যোগেই ঘর নির্মাণ হোক, এর মান তদারকি ও বাস্তবায়ন করবে উপজেলা পর্যায়ের পিআইসি কমিটি। আর জাতীয় পর্যায় থেকেও মান যাছাইয়ের জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি থাকবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘ঘরহীন মানুষকে ঘর করে দেওয়ার একটি প্রকল্প চলমান ছিল। এ পর্যন্ত ২৯ হাজার দুর্যোগ সহনীয় ঘর করে দেওয়া হয়েছে। সেটি এখন বন্ধ। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব ঘরহীন মানুষকে ঘর দেওয়ার প্রকল্পের অংশ হিসেবে আমাদের প্রকল্পটি যুক্ত হয়েছে। আশা করি অনেক ভালো একটি কাজ হবে। গরিব মানুষরা বিনা মূল্যে সুন্দর একটি মাথা গোজার ঠাঁই পাবে।’