নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৬ সালের ২১শে আগস্ট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী। উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করার পরপরই বিভিন্ন বিভাগের সেশনজট কমানোর নির্দেশ দেন প্রতিটি বিভাগের সভাপতিকে। এসময় তিনি ঘোষণা দেন সেশনজটকে যাদুঘরে পাঠানোর। তবে এখনো জটমুক্ত হয়নি উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের বিভাগও।
আগামী ২০ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ড. রাশিদ আসকারীর চার বছরের মেয়াদ। উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো দূর হয়নি সেশনজটের ঘানি। প্রকাশ্যে সেশনজটকে যাদুঘরে পাঠানোর ঘোষনা দিলেও বিভিন্ন বিভাগে সেশনজট এখনো দৃশ্যমান পর্যায়েই রয়েছে। সেশনজট কমানের দিক থেকে পূর্বের উপাচার্যের ন্যায় ড. রাশিদ আসকারীকেও ব্যর্থ উপাচার্য বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানায়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর শ্লোগানটি একটা সস্তা শ্লোগান মাত্র।
জানা যায়, বেশকয়েকটি বিভাগে এখনো ৬মাস থেকে দেড় বছরের সেশন জট রয়েছে। এসব বিভাগগুলোতে ৫বছরের অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করতে ৬ থেকে ৭ বছর লেগে যাচ্ছে। যারফলে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মুল্যবান সময়। সরকারী বিভিন্ন চাকরিতে অপেক্ষাকৃত কম সময় পাচ্ছে তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে মোট ৩৪টি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে ২৫টি বিভাগে অনার্স মাস্টার্স চলমান। এই ২৫টি বিভাগের অধিকাংশ বিভাগেই রয়েছে সেশনজট। তবে এ সেশনজটের তালিকায় প্রথমদিকেই অবস্থান আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, পরিসংখ্যান, ব্যবস্থাপনা বিভাগ। এই বিভাগগুলোতে এখনো কয়েকটি শিক্ষাবর্ষে এক থেকে দুই বছরের সেশনজট রয়েছে।
সেশন জটের তালিকায় প্রথমে থাকা আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজের প্রতিটি শিক্ষাবর্ষে রয়েছে সেশনজট। ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানায়, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের এখনো স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা ই দিতে পারেনি। ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক শেষ করতেই লেগে যায় ৬বছর। কোর্সের নিয়মানুযায়ী ২০১৭ সালে তাদের স্নাতক এবং ২০১৮ সালে তাদের স্নাতকোত্তর শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ২০১৭ সালে তাদের অনার্স সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয় ২০১৯ সালে।
করোনায় আগ পর্যন্ত তাদের স্নাকোত্তর প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস চলছে। অন্যদিকে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা অনার্সের রেজাল্টের অপেক্ষায় আছে। অথচ ২০১৮ সালে অনার্স শেষ করে ২০১৯ সালের মধ্যে তাদের মাস্টার্স শেষ হওয়ার কথা ছিল। এছাড়া অন্যন্য সেশনেও রয়েছে ৬মাস থেকে ১বছরের জট।
এদিকে ইংরেজি বিভাগের ২০১৩-১৪ স্নাতকোত্তর শিক্ষাবর্ষের ফলাফল প্রকাশ হয়নি। এছাড়া ইংরেজি ও আইন বিভাগের ১৪-১৫ স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময়সূচি দিয়েছে মাত্র। এ নিয়ে এই দুই বিভাগ ৮ মাসের জটে পরেছে। তারমধ্যে চার মাস করোনার কারণে।
একই অবস্থা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের। এই বিভাগ থেকেও এখানো বের হতে পারেনি ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানায় করোনার ছুটির আগে তাদের সবেমাত্র এমএসসি প্রথম সেমিস্টারের ল্যাব পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। প্রথম সেমিস্টারের থিওরী পরীক্ষা ও দ্বিতীয় সেমিস্টার সম্পন্ন করতে এখনো ৩মাসের বেশি সময় পর্যন্ত লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের এখনো বিএসসির ফলাফল প্রকাশ হয়নি এবং ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এখনো সম্পন্ন হয়নি বিএসসির ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা।
২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের বের করতে পারেননি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগটিও। ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানায়,করোনার ছুটির আগে তাদের এমবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষার রুটিন দেয়া হয়। করোনা ছুটির পর ক্যাম্পাস খুললেও এমবিএ সম্পন্ন করতে আরো ২ মাস লেগে যেতে পারে। সব মিলিয়ে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করতে অন্তত সাড়ে সাত বছর লেগে যেতে পারে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। বিভাগটিতে বর্তমানে এমবিএ ব্যাচ রয়েছে দুটি । তাছাড়া ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এখনো এমবিএ ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা দিতে পারেনি।
এছাড়াও ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স পরীক্ষা নিতে পারেনি পরিসংখ্যান, গণিত, ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ। এদের মধ্যে কিছু বিভাগ ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের অনার্সের পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও ফলাফল পায়নি শিক্ষার্থীরা। এসব বিভাগগুলোর অন্যন্য শিক্ষাবর্ষেও রয়েছে জট। অপরদিকে বেশকিছু বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্সের পরীক্ষা হলেও ফলাফল পায়নি তারা।
সেশনজটের চাপায় পিষ্ট হয়ে তাদের জীবনের অবস্থা। উচ্চ শিক্ষার চৌকাঠ পেরিয়ে চাকরী জীবনের প্রায় দুটো বছর কাটিয়ে দিতে হচ্ছে বিশ^বিদ্যালয়ে। এমতাবস্থায় ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় উপাচার্যের দেয়া শ্লোগনটি মিথ্যা বুলি আওড়ানোর মতো। সেশনজটের দিক থেকে পূর্বের উপাচার্যের সাথে ড. রাশিদ আসকারীর মধ্যে কোনো পার্থক্যই খুজে পাননা বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েও এখনো অনার্সের সনদ পেলাম না। আমাদের শিক্ষাবর্ষের বেশ কিছু বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনেকেই মাস্টার্সের সনদও পেয়ে চাকরিতে আছে। আমাদের ভবিষ্যৎ কি? নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে আর কতদিন পরিবারের বোঝা হয়ে থাকবো আমরা? জীবন থেকে অতিরিক্ত ২বছর চলে যাচ্ছে।’