নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করতে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করার দাবি করেছে ১৪ দল। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের মুখপাত্র, সমন্বয়ক এবং আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।
তিনি বলেন, এই সভা থেকে অনেকেই ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের নায়কদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন। কমিশন গঠন করার মধ্য দিয়ে তদন্ত করা হোক যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, কারা নেপথ্যে নায়ক ছিল। যারা নেপথ্যে নায়ক হিসেবে হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছে এজন্য একটা তদন্ত কমিশন গঠন হওয়া উচিত। আমি মনে করি ১৪ দলের পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি এবং এটা গ্রহণ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালরাতে জাতির পিতাকে সপরিবারে হারিয়েছিলাম। সেদিন হারাতে শুরু করেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূল্যবোধ। যে জাতীয় চারনীতির ভিত্তিতে সংবিধান রচিত হয়েছিল, সেই জাতীয় চারনীতি ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতির কোনো অনুমোদন ছিল না সংবিধানে, সেটা তুলে দিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর জীবন-দর্শন তুলে ধরে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়নি, আমাদের স্বাধীনতার চেতনা মূল্যবোধকে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারী কয়েকজন খুনির জবানবন্দিতে এটা পরিষ্কার যে, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল এতে কোনো সন্দেহ নেই। পাকিস্তানিরা পারেনি খন্দকার মোশতাক ও জিয়া দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। তিনি বলেন, সময় এসেছে একটা কমিশন গঠন করে তদন্ত করা। কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল যারা বিদেশি তারা কারা? তদন্ত করলে প্রকৃত কুশীলবরা বেরিয়ে আসবে।
১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড কোনো ব্যক্তির হত্যা ছিল না, এটা ছিল রাজনীতিকে হত্যা, বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিতে মুক্তিযুদ্ধের পথ থেকে সরিয়ে নেওয়ার হত্যাকাণ্ড। জিয়া সংবিধান খণ্ডবিখণ্ড করেছে। সময় এসেছে একটি কমিশন গঠন করে কুশীলবদের খুঁজে বের করার।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড অবিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। শুধু একজন ব্যক্তির হত্যাকাণ্ড নয় অথবা শুধু ক্ষমতার রদবদলের হত্যাকাণ্ড নয়, এটা সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করা হয়নি, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র এবং সংবিধানের আত্মাকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে পাকিস্তান পন্থায় সাম্প্রদায়িকতা ও অপরাজনীতির পথে বাংলাদেশকে ঠেলে দেওয়ার একটা চেষ্টা মোশতাক এবং জেনারেল জিয়াউর রহমানগং করেছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রকে হত্যা করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল, যারা স্বাধীনতা চায়নি যে আন্তর্জাতিক শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আমাদের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানের চর হিসেবে যারা আমাদের মধ্যে ছিল, তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। নীলনকশার মাধ্যমে দেশকে হত্যা করার জন্য আমাদের স্বাধীনতা হত্যা করার লক্ষ্যে হত্যাকাণ্ড হয়েছিল। এই হত্যাকাণ্ডের কুশীলব জিয়া-মোশতাকসহ যারা কুশীলব ছিল তাদেরও বিচার হওয়া প্রয়োজন। একটি কমিশন গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলব ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার করার প্রস্তাব করছি। এটা ছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার অপরিপক্ব হবে। জীবিত কুশীলবদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার পরিপূর্ণতা পাবে। পরবর্তী প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।