নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের প্রভাব যেসব খাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে তার মধ্যে অন্যতম তেলের বাজার। এ ভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমেছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। তবে মজুদের জন্য অতিরিক্ত অয়েল ট্যাঙ্কার না থাকার জন্য এর সুফল পেতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ।
তবে বিশ্ববাজারে এর দাম কমাকে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় এলএনজি আমদানিতেও সুফল পাচ্ছি।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনে দেশে যে অয়েল ট্যাঙ্কার রয়েছে তাতে মাত্র ৩৬ দিনের তেল মজুদ রাখা যায়। আর সম্প্রতি করোনার প্রভাবে গণপরিবহনের চলাচল সীমিত হওয়ার কারণে সব ট্যাঙ্কার প্রায় পূর্ণ রয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, যেহেতু বিশ্ববাজারে এখন তেলের দাম কম তাই এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগানো উচিত। করোনার সঙ্কট কাটিয়ে অর্থনীতির চাকা আবার যখন সচল হতে শুরু করছে তখন প্রচুর জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হবে। এই সুযোগ মজুদ বাড়ানোর পরিকল্পনা না করতে পারলে ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণ করা কঠিন হবে।
তবে মজুদ বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোবলের কারণে আমরা ইতোমধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। সমকালীন সমস্যার চ্যালেঞ্জগুলোকে বাস্তবতার নিরিখে আমাদের সমাধান করতে হবে। যখন এলএনজির আমদানি নিয়ে কথা উঠেছিল তখন অনেকেই বলেন, এটা তো ব্যয়বহুল। তখন বিকল্প জ্বালানির কোনো উপায় ছিল না।
এখন সেই ব্যয়বহুল জ্বালানির দাম প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। আমরা পাচ্ছি। আমাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়েছে। এরকম সাহস না করলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পৌঁছানো যেত না। বিপিসি সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে আরও কিছু অয়েল ট্যাঙ্কার রয়েছে, সেগুলো ব্যবহারের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সেগুলোতে একবার তেল নিয়ে রেখে আসা, আবার তা ফেরত আনতে দুই দফা পরিবহন খরচ লেগে যাবে। তা ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের এসব ট্যাঙ্কারের মজুদ ক্ষমতাও কম। ফলে এই চিন্তা কতটা ফলপ্রসূ তা নিয়ে দ্বিধায় আছে প্রতিষ্ঠানটি।
করোনা পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যারেলপ্রতি তেলের দাম ১৫ ডলারের নিচে চলে যায়। এমনকি ফিউচার মার্কেটে মে মাসের জন্য করা চুক্তিতে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ‘শূন্য’ ডলারেরও নিচে নামে। সে দেশে তেল নিয়ে যেতে উল্টো ক্রেতাদের অর্থ দিতেও রাজি হয়ে যান বিক্রেতারা। দেশটিতে তেলের এরকম দরপতন অবস্থা আগে কখনও কেউ দেখেনি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা সঙ্কট ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে দাবি করে দেশের জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনি মজুদ না বাড়ালে আবারও উচ্চমূল্যে বিশ^বাজার থেকে তেল কিনতে হতে পারে বাংলাদেশকে। তাই মজুদের জন্য অয়েল ট্যাঙ্কার বাড়ানোর বিকল্প নেই। কিন্তু বিপিসি এখন এই সুবিধা নিতে পারবে না বলেও মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, বিপিসির বেশি দিনের জন্য তেল মজুদের সুযোগ নেই। তারপরেও বেসরকারি পর্যায়ে অনেকে তেল কিনে মজুদ করে। তাদের সঙ্গে নিয়ে এ সময়ে মজুদ বাড়ানো দরকার। দাম কমে যাওয়ার পুরো সুবিধাটা নেওয়া দরকার। স্থায়ী আর্থিক সক্ষমতা গড়ে তুললে কোম্পানিগুলো নিজেরাই সক্ষম হবে। এতে করে দাম না বাড়িয়েও সঙ্কটকালীন সময় পার করা যাবে।
বিপিসি জানায়, গত বছর (২০১৯) বিপিসি পরিশোধিত-অপরিশোধিত মিলিয়ে ৫৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬২৮ টন জ্বালানি তেল আমদানি করে। এর মধ্যে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের পরিমাণ ৪২ লাখ ২৮ হাজার ২০০ টন এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ১১ লাখ ৬৬ হাজার ৪২৮ টন।
বিপিসি সূত্র বলছে, তাদের ডিপোতে ৩৬ দিনের জ্বালানি তেল মজুদ রাখা যায়। যদিও বিপিসির অফিসিয়াল দাবি, তারা দুই মাসের অর্থাৎ ৬০ দিনের তেল মজুদ রাখতে পারে। তবে এই দাবি সঠিক নয় জানিয়ে বিপিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ৩৬ দিনের বাইরে আরও ছয় দিনের জ্বালানি তেল ট্যাঙ্কারে পরিবহন অবস্থায় থাকে। পরিবহন ট্যাঙ্কারের মজুদসহ ধরলেও বিপিসির তেলের মজুদ সক্ষমতা ৪২ দিনের বেশি নয়।