প্রত্যয় নিউজডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও দলটির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, খালেদা জিয়ার ওজন এবং মুখের রুচি কমে গেছে। গত কয়েক মাস ধরে তিনি কোনো শক্ত খাবার খেতে পারছেন না।
শনিবার (২৯ আগস্ট) রাতে গুলশানে খালেদা জিয়ার ভাড়াবাসা ফিরোজা’য় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করার পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
সাক্ষাতের পর বাড়ির গেটে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি অসুস্থ, তার জরুরিভাবে চিকিৎসা প্রয়োজন।’
রাত আটটার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার আইনজীবী ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাত সোয়া নয়টার দিকে তিনি সেখান থেকে বের হয়ে যান।
পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে সমস্যা, হাঁটুতে ব্যথা। ম্যাডামের ওজন কমে গেছে এবং তার রুচিও কমে গেছে। গত কয়েক মাস ধরে তিনি শক্ত কোনো খাবার খেতে পারছেন না।’
আইনজীবী বলেন, ‘তার কোনো সুচিকিৎসা হচ্ছে না। এজন্য তার ভাই সাঈদ ইস্কান্দার বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। সেই আবেদনে দেশে এবং বিদেশে চিকিৎসা যেকোনো স্থানে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য বলেছেন।’
‘চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া দেশের বাইরে কোন রাষ্ট্রে যাওয়ার চিন্তা করেছেন’-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খোকন বলেন, ‘দেশের বাইরে কোথায় যাবেন এখনো তা নিশ্চিত করেননি।’ ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী বলেছেন, আদালতের অনুমতি ছাড়া খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে পারবেন না’-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘দুদকের বিজ্ঞ আইনজীবী অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন। এটা বলবেন না। সরকার মূল আদেশ দিয়েছেন। এখন আবার সরকারই বিবেচনা করতে পারেন তার মুক্তির মেয়াদ বাড়াবেন কি-না।’
তিনি বলেন, সরকার এক্সেস দিয়ে তাকে মুক্তি দিয়েছেন। এখানে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন মনে করছি না। মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, খালেদা জিয়ার মেজর সমস্যা শারীরিক এবং ওল্ডনেস। তার বয়স এখন ৭৫ বছর।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য সরকার বিদেশ যেতে অনুমতি দেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। এছাড়া সাজা স্থগিতের মেয়াদ সরকার বাড়াবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এর আগে গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি চেয়ে ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার সেই আবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। এ সংক্রান্ত বিষয়েও মাহবুব উদ্দিন খোকন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা গত ২৪ মার্চ স্থগিত করে সরকার। পরের দিন ২৫ মার্চ মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসায় ওঠেন খালেদা জিয়া।
মুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারছেন না। ছয় মাসের মধ্যে পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও চিকিৎসা শুরু হয়নি খালেদা জিয়ার। যেটুকু হচ্ছে বাসায় নিজস্ব চিকিৎসকের পরামর্শে।
তার চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার হাঁটুর চিকিৎসা এর আগে লন্ডনে করা হয়েছিল। হাঁটুর সেই জয়েন্টে ব্যথার কারণে তিনি হাঁটাচলা করতে পারেন না। তাই তাকে পুনরায় বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেয়া প্রয়োজন।
এসব বিষয়ে পারিবারিকভাবে সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার চলছে বলে জানা গেছে। তবে দলের কেউ এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কিছু বলতে আগ্রহী নয়।
এদিকে, শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে তার পরিবার। বিষয়টি জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম জিয়ার ছোট ভাই আবেদন করেছেন। পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জানা গেছে, শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করেন বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার।
গত ২৫ মার্চ দুই শর্তে মানবিক কারণে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিতাদেশের পর ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান খালেদা জিয়া। সেই সাজার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর।
দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় কারাগারে যান বেগম জিয়া। পরে শারীরিক অসুস্থতার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
করোনা সংকটের মধ্যে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান খালেদা জিয়া। মুক্তির পর গুলশানের ভাড়াবাসা ফিরোজায় ওঠেন তিনি। সেখানে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ করে এই বাসায়ই আছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে সাময়িক মুক্তি লাভ করেন বেগম খালেদা জিয়া।