নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধবংসের ষড়যন্ত্র করছে নূরুল হুদা কমিশন। এর আগে রকিবউদ্দিন কমিশনও একই কাজ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা সফল হননি বলে মন্তব্য করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত অনলাইন গোলটেবিলের বক্তারা।
গতকাল বুধবার সুজন-এর পক্ষ থেকে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনী প্রস্তাব ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা আরও বলেন, নূরুল হুদা কমিশন আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচনে এজেন্টদের ক্ষমতা, প্রিজাইডিং অফিসারদের ক্ষমতা, নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা খর্ব করতে চায়। শুধু তাই কমিশনের হাতে নির্বাচন এবং প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিলের যে ক্ষমতা রয়েছে সেটাও বাতিল করতে চাইছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আইনগত যে ক্ষমতা রয়েছে সেটাও তারা ভোগ করতে চাচ্ছেন না।
সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
এছাড়া বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, বিচারপতি আব্দুল মতিন, সাবেক কেবিনেট সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ড. শাহদীন মালিক, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সাংবাদিক গোলাম মর্তুজা ও আবু সাইদ খান প্রমুখ।
এসময় ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রকিবউদ্দিন কমিশন থেকে শুরু করে নূরুল হুদা কমিশনও চাচ্ছেন নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে, একে দুর্বল করে দেওয়া। আর সেজন্য কমিশন চাচ্ছে আরপিও সংশেধন করে কমিশনের সব ক্ষমতা সরকারের হাতে তুলে দিতে।
তিনি বলেন, বর্তমান কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। কমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রমে আমরা নাগরিক হিসাবে উদ্বিগ্ন বোধ করছি। সব চেয়ে পরিতাপের বিষয় হল, যে কাজে তাদের নিবিষ্ট থাকা দরকার আরপিওসহ বিদ্যমান নির্বাচনি আইনগুলোর সঠিক ও কঠোর প্রয়োগ না করে কমিশন যেন অকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে আজ একটি আইন প্রণয়ন করা দরকার, যে দিকে কমিশন ভ্রুক্ষেপ করছে না। আমাদের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে সিইসি ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া আছে, কিন্তু গত ৪৮ বছরেও কোনো সরকারই তা করেনি।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, কমিশনের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে কমিশন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দায়মুক্তি নিতে চাচ্ছে। কমিশনের দায়দায়িত্ব পালনের যে বাধ্যবাধকতা আছে আইন পরিবর্তন করে সেটি থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছে। ভাবটা এমন যেহেতু আমরা কিছু করতে পারছি না, সেহেতু আমাদের দায়দায়িত্ব থাকারও দরকার নেই। একটি প্রতিষ্ঠান তখনই নিজেকে ধ্বংস করতে চায় যখন সে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিজেকে দায়মুক্ত ঘোষণা করতে চায়।
আলোচনা সভায়, বিগ্রেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন কমিশনের মডেল থেকে মিশ্র মডেলের দিকে যাচ্ছে বলে আমার মনে হয়। তখন সরকার নির্দেশিত প্রক্রিয়ায় কমিশন নির্বাচন করবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রকল্প কমিশন সরকারের হাতে তুলে দিচ্ছে বলে শুনতে পাচ্ছি। এটা হলে ভোটার তালিকা তৈরির ক্ষমতা সরকারের কাছে চলে যাবে। ফলে সরকার নিজের ইচ্ছামত ভোটার তালিকা করার সুযোগ পাবে। এটা আমাদের নির্বাচনের জন্য একটি অশনিসংকেত বলে আমি মনে করি।
তিনি কয়েকটি প্রস্তাবনা করেন, তার মধ্যে আছে রেজিস্ট্রেশন পলিসি তৈরি, এক্সপেন্ডিচার মনিটরিং কমিটি গঠন, রাজনৈতিক দলের ব্যয়ের অডিট, নারী প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয় পাবলিক ফান্ড থেকে করা ও ইভিএম ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি।
সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের এখন কমিশন নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে কথা বলা দরকার। কমিশনার নিয়োগের জন্য যে সার্চ কমিটি করা হয় সেই সার্চ কমিটির ব্যাপারে আমাদের অনাস্থা চিঠি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
সভাপতির বক্তব্যে এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। কোনো সরকারই নির্বাচন সুষ্ঠু হোক এটা চায় না। গণজাগরণ না হলে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন করতে এগিয়ে আসবে না।