বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:সোমেন মিত্র প্রয়াত হয়েছেন বেশ কিছুদিন হয়ে গেল। ফলে পশ্চিমবাংলায় প্রদেশ কংগ্রেসে সভাপতির পদটি শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। সাময়িক ভাবে অন্তবর্তীকালীন দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বাংলা থেকে রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। নতুন প্রদেশ সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে দিল্লি থেকে হাইকমান্ডের কোনও নির্দেশ এখনও পর্যন্ত কলকাতার বিধান ভবনে এসে পৌঁছয়নি। এরই মাঝে লোকসভায় কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেতা অধীর চৌধুরির একটি মন্তব্যে রীতিমতো জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্য কংগ্রেসি মহলে। পাশাপাশি আবদুল মান্নানের একটি চিঠি সেই চর্চাকে আরও মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে গিয়ে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরি স্পষ্টই বলে দেন, ‘আমাদের দলনেত্রী সোনিয়া গান্ধী যদি চান, তা হলে আমি ফের প্রদেশের দায়িত্ব নিতে রাজি আছি।’ কিন্তু আচমকা অধীর চৌধুরি এমন মন্তব্য করলেন কেন, তা নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দর মহলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। কংগ্রেস সূত্রে খবর, সোমেন মিত্রের মৃত্যুর পর প্রদেশ সভাপতি হিসেবে নাকি প্রদীপ ভট্টাচার্যের নামই চূড়ান্ত হয়ে রয়েছে। এই দায়িত্ব নিতে প্রদীপবাবুরও আপত্তি নেই। বিধান ভবনের অনেকেই সেই খবর জানেন। তাঁদের মারফত দলের অন্য নেতা ও কর্মীরাও সেই সংবাদ পেয়ে গিয়েছেন। প্রদেশে সোমেন মিত্রের অনুগামী নেতা হিসেবেই প্রদীপ ভট্টাচার্য পরিচিত ছিলেন। তাই সোমেন অনুগামীদের সমর্থনও রয়েছে তাঁর দিকে।
এদিকে, প্রদীপ ভট্টাচার্যের সভাপতি হওয়া নিয়ে তাঁর নিজের ঘনিষ্ঠদের পাশাপাশি অন্য কয়েকজন নেতা ও তাঁদের অনুগামীদের সমর্থনও রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এমনকী, প্রদীপবাবুকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতিও তাঁরা নিয়ে রেখেছিলেন বলে খবর। কথা ছিল, হাইকমান্ড ঘোষণা করলেই তাঁরা প্রদীপবাবুকে নতুন দায়িত্ব নেওয়ার জন্য সংবর্ধনা জানাবেন। গত সপ্তাহেই দিল্লি থেকে হাইকমান্ড আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন সভাপতি হিসেবে প্রদীপ ভট্টাচার্যের নাম ঘোষণা করবে বলে তাঁরা জানতেন। কিন্তু সেই নির্দেশ কলকাতার বিধান ভবনে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এসে পৌঁছয়নি। কেন সেই নির্দেশ আসেনি, তা অবশ্য সঠিক ভাবে বিধান ভবন জানে না। এরই মধ্যে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বিষয়টি আরও থমকে যায় বলে তাঁদের ধারণা।
বিধান ভবন সূত্রে বুধবার রাতে জানা গিয়েছিল, হাইকমান্ড নাকি বিধান ভবনকে আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে, যত শীঘ্র সম্ভব নতুন প্রদেশ সভাপতির নাম হাইকমান্ড ঘোষণা করবে বলেও নাকি জানিয়েছে। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার অধীর চৌধুরি জানিয়ে দেন, আগে তিনি প্রদেশের দায়িত্ব সামলেছেন। তাই প্রদেশ সামলানোর অভিজ্ঞতা তাঁর আছে। সেইজন্য সোনিয়া গান্ধী চাইলে তিনি ফের প্রদেশ সভাপতি হতেই পারেন। তবে, অবশ্যই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীই। ফলে প্রদেশ সভাপতি কে হবেন, আদৌ প্রদীপ ভট্টাচার্য ওই পদ পাবেন কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কারণ, পদাধিকার বলে অধীর চৌধুরি এখন কংগ্রেসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা। তাই তিনি যে আলটপকা মন্তব্য করবেন না, তা সহজেই অনুমেয়।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে রাজ্য কংগ্রেসে অধীর এবং সোমেন দুই শিবিরের নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কংগ্রেসের কর্মসূচিগুলিতেও দুই নেতার অনুগামীরা তাই আলাদা অবস্থানে থাকতেন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, লোকসভায় কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেতা হওয়ায় অধীর চৌধুরির ওপর কাজের চাপ যথেষ্ট বেশি। তাই তাঁকে প্রদেশের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হলে অতিরিক্ত কাজের চাপ পড়বে অধীরের ওপর। তাই হাইকমান্ড সেই দায়িত্ব তাঁকে নাও দিতে পারে। পাশাপাশি এ কথাও সত্য, এই মুহূর্তে হাইকমান্ডের কাছে অধীরবাবুর গুরুত্ব যথেষ্ট বেশি। এই মুহূর্তে তাঁর ইচ্ছে বা অনিচ্ছেকে হাইকমান্ড অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। সুতরাং, তিনি নিজেই যদি প্রদেশের দায়িত্ব নিতে চান, তা হলে হাইকমান্ড তা মেনে নিতেই পারে।
ফলে অনেকেই মনে করছেন, প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার সৌভাগ্য এবারও প্রদীপ ভট্টাচার্যের নাও হতে পারে। বরং সেই দায়িত্ব ফের পেতে পারেন অধীর চৌধুরিই। আবার কয়েকদিন আগে রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান সোনিয়া গান্ধীকে গোপনে একটি চিঠি লিখে পরবর্তী প্রদেশ সভাপতি হিসেবে অধীর চৌধুরির নামই সুপারিশ করেছেন। অধীর চৌধুরি সভাপতি হলে রাজ্যের মানুষের কাছে কংগ্রেসের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে বলেও চিঠিতে তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন। কারণ হিসেবে লোকসভায় অধীরের গুরুত্ব বৃদ্ধির কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতো লড়াকু নেতা প্রদেশ সভাপতি হলে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনেও বামেদের সঙ্গে দর কষাকষির ক্ষেত্রে অনেকটাই ভারী হবে কংগ্রেস।
অধীর চৌধুরির হয়ে হাইকমান্ডের কাছে মান্নান এ ভাবে চিঠি লেখায় প্রদেশ নেতাদের অনেকে বিস্মিত হলেও বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। ফলে পরবর্তী প্রদেশ সভাপতি কে হবেন, তা নিশ্চিত ভাবে বলা না গেলেও অধীর চৌধুরির দিকেই আপাতত পাল্লা ঝুঁকে গিয়েছে বলে তাঁদের ধারণা।