প্রত্যয় নিউজডেস্ক: মাদারীপুর পৗরসভার ৯নং ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের সভাপতি তাজ নেহারের বাবা এবং এক সময়ের ‘তাজ বিড়ি ফ্যাক্টরি’র মালিক কোটিপতি ব্যবসায়ী নুরু মাতুব্বর (৬৫) উন্নত চিকিৎসার অভাবে সদর হাসপাতালের ফ্লোরে পড়ে আছেন। তার খোঁজ নেননি ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের কেউ। চিকিৎসকরা বলছেন জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা করা না গেলে নুরু মাতুব্বরকে বাঁচানো কষ্টসাধ্য হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার ঝিকরহাটি গ্রামের নুরু মাতুব্বর মাদারীপুরের এক সময়ের তাজ বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক ও কোটিপতি ব্যবসায়ী ছিলেন। তার এক ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। ১৫ বছর আগে ছেলে-মেয়েদের নিজের সকল সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। সেই ব্যক্তিই চিকিৎসার অভাবে এখন মুমূর্ষু অবস্থায় সদর হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে আছেন। অথচ ৪ দিনেও খোঁজ নিতে আসেননি কেউ।
অসুস্থ হওয়ার আগে তিনি চরমুগুরিয়া বাজার এলাকায় একটি দোকানে রাতে পাহাদার হিসেবে কাজ করতেন। ওই দোকানের মালিক তাকে তিন বেলা খাবার দিতেন। আবার কখনও মানুষের বাড়িতে ঘুরে দু’বেলা খাবার খেতেন। এরপর খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয় লোকজন।
বেশ কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে যায় চরমুগরিয়া এলাকার তাজ বিড়ি ফ্যাক্টরি। পরে ফ্যাক্টরির মালিক নুরু মাতুব্বর বাড়ি বিক্রি করে ছেলে আবু সাইদকে লন্ডনে পাঠান পড়াশোনা করতে। লন্ডন থেকে ফিরে এসে ছেলে আবু সাইদ বিয়ে করে ঢাকায় ব্যবসা করছেন। পরে নুরু মাতুব্বরের বিঘার পর বিঘা জমি তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে লিখে দেয়ার পাশাপাশি তাদের সভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে দেন। অথচ গত ১৫ বছর ধরে বাড়িছাড়া তিনি। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে খাবার সংগ্রহ করলেও আজ চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুশয্যায় এখন সদর হাসপাতালের ফ্লোরে পড়ে আছেন। এমন ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
নুরু মাতুব্বরের মেয়ে শামসুর নাহার চৈতী বলেন, পারিবারিক ঝামেলার কারণে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। বাবা তার মতো করে থাকেন আমরা মাকে নিয়ে আমাদের মতো থাকি।
মাদারীপুর পৌরসভা ৯নং ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও নুরু মাতুব্বরের বড় মেয়ে তাজ নেহার বলেন, বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তাই আমরা খোঁজ খবর নিই না।
জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নারগিস সুলতানা বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য এ রকম মানবতাহীন কাজ করতে পারে না। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করব।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান পাভেল বলেন, গত তিন-চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছেন এই বৃদ্ধ। আমরা তাকে আমাদের সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। তাকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া খুব জরুরি। আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দুদিন আগে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছিলাম। কিন্তু তাকে ফরিদপুর কে নিয়ে যাবে? তার কোনো স্বজন এখন পর্যন্ত হাসপাতালে তার খোঁজ নিতে আসেনি। তার এখন উন্নত চিকিৎসা, যত্ন ও ভালো খাবারের প্রয়োজন। এসব না পেলে হয়তো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, এক বৃদ্ধ কয়েকদিন ধরে সদর হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছে। তার খোঁজ খবর নিতে কেউ আসে না শুনে আমি সকালে হাসাপাতালে তাকে দেখতে যাই। তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়ে আসি। তার ভরণপোষণ ও খোঁজ না নেয়ায় সন্তানদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।