প্রত্যয় নিউজডেস্ক: করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির হয়ে পড়া সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি ফেরাতে ও ঝুলে থাকা সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করতে বসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো বসতে যাওয়া এই সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, শনিবার (৩ অক্টোবর) বেলা ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মাত্র ৩২ জনকে নিয়ে এ সভা বসবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতা বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন এমন কেউ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত হতে পারবেন না। ৩৫ সদস্য নিয়ে সভার আয়োজনের কথা থাকলেও তা কমিয়ে ৩২-এ আনা হয়েছে। এই ৩২ জনের প্রত্যেকের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট নেগেটিভ আসা নেতারাই কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় অংশ নিচ্ছেন।’
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
এতে আরও বলা হয়, সভায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আমন্ত্রিত সদস্যদের যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপস্থিত থাকার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনুরোধ জানিয়েছেন।
গত ৯ মার্চ গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। করোনাকালে গত ১৬ সেপ্টেম্বর গণভবনে সীমিত পরিসরে সভাপতিমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৬ সেপ্টেম্বর দলের সংসদীয় বোর্ডের এবং ২১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, ‘কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে শুধুমাত্র ৩২ জন সদস্য উপস্থিত থাকবেন। যারা বৈঠকে থাকবেন তাদের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। অতীতে যাদের করোনাভাইরাস হয়েছে এবং এখনও করোনাভাইরাস আছে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।’
ওই নেতা আরও জানান, সভায় সভাপতিমণ্ডলীর ৮ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দুজন, সম্পাদকমণ্ডলীর ৮ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ৬ জন এবং কার্যনির্বাহী সদস্য ৬ জন উপস্থিত থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘করোনা যেহেতু সংক্রামক ব্যাধি এটা একজন থেকে আরেকজনে ছড়াতে পারে, তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক সুরক্ষাটাও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। সেজন্য ওখানে যাওয়ার আগে করোনা টেস্ট করা হয়েছে। যাদের করোনা নেগেটিভ এসেছে তারাই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।’
নেতারা জানান, কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দল ও সরকারের বিগত দিনের কার্যক্রমের পর্যালোচনা হবে। ভবিষ্যতে কোন পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা নিয়েও আলোচনা হবে। সীমিত পরিসরে বসলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত আসতে পারে এই সভা থেকে। করোনার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে থাকছে বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচি নির্ধারণ, বিভিন্ন জেলার কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা, উপকমিটিগুলো চূড়ান্ত, করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়।
এছাড়াও বৈঠকে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ সম্মেলন হওয়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ এবং শ্রমিক লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে আলোচনা হবে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে দু-একটি ছাড়া প্রায় সব বিভাগীয় উপকমিটির খসড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতরে জমা পড়েছে।
আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটির ৮টি পদ ফাঁকা রয়েছে। এর মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর ২টি, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও কার্যনির্বাহী সদস্যের ৩টি পদ রয়েছে। তবে বর্তমানে আওয়ামী লীগ শুধু ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের পদটির বিষয়ে ভাবছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘দলের শূন্য পদ নিয়ে আলোচনা হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ এটা নিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সভায় আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা নেত্রীকে বলেছি আপনি দেখেন, উপযুক্ত লোকের বিষয়ে আপনি যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যদি কেউ কারও নাম প্রস্তাব করে সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তবে তা হবে বলে আমার মনে হয় না।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। কোভিড-১৯ নিয়েও আলোচনা হবে। আর অবশ্যই আলোচনা হবে আমাদের সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে।’
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ জানান, এবারের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে থাকছে বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচি নির্ধারণ, বিভিন্ন জেলার কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা ও উপকমিটিগুলো চূড়ান্তসহ বিভিন্ন বিষয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন পর্যন্ত ৩১টি জেলায় সম্মেলন করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে কমিটি দেয়া হবে। এছাড়া সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটিও দেয়ার আলোচনা হবে। আমরা ওয়ার্ড, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে তৃণমূলে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরুর চেষ্টা করছি। আমাদের প্রত্যেক সম্পাদকের নেতৃত্বে যে সাব কমিটি আছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেয়া হবে।’