প্রত্যয় নিউজডেস্ক: নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ছাড়া এই ধরনের ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। আমরা সবাই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছি, সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ফাঁসি চাচ্ছি। কিন্তু বর্তমান ঘটনাবলি হলো ভঙ্গুর রাষ্ট্রব্যবস্থা নামক রোগের সিস্টেম।
বুধবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ‘ধর্ষণবিরোধী বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাবেশ’ ও মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী।
বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধূরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন যুগ্ম-আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
সমাবেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তাতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় দেশব্যাপী ধর্ষক গড়ে উঠছে। এ অবস্থায় আমরা যদি সোচ্চার না হই তাহলে এই সমস্ত ঘটনা ঘটতেই থাকবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে, সুশাসন নিশ্চিত না হলে এটাকে বন্ধ করা যাবে না।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট গৌতম দাস বলেন, আইনশৃঙ্খলা ছাড়া যদি রাষ্ট্র চলতো তাহলে গত ৪০০ বছর ধরে এত রাষ্ট্রবিষয়ক নিয়মনীতির দরকার ছিল না। আমরা স্বীকার করি বা না করি বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিগত ঘটনাবলিতে তা প্রমাণিত। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে ধর্ষণের সাথে ক্ষমতা সম্পৃক্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা বিশিষ্ট অপরাধবিজ্ঞানী ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, গত সাড়ে চার বছরে সাড়ে সাত হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছে। গত চার মাসে ধর্ষিত হয়েছে আট শতাধিক নারী। ধর্ষণের বিচারে আইন ও তদন্ত ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবাদে কোনো পরিবর্তন আসে না, পরিবর্তন আসে প্রতিরোধে। ধর্ষণ মামলায় ৯৭ ভাগের বিচার হয় না। মাত্র তিনজন ধর্ষক শাস্তি পায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক পরিবর্তন দরকার।
সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মণি বলেন, যে জাতি তার মায়ের সম্ভ্রম, বোনের ইজ্জত রক্ষা করতে পারে না তাদের ধ্বংস অনিবার্য। এখন সময় মোমবাতি নিয়ে প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর ড. মাইমুল আহসান খান বলেন, ক্ষমতা আর অর্থের অসম বণ্টনের ফলে সমাজে দুই ধরনের মানুষ তৈরি হয়। এক ধরনের মানুষ নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে। আরেক ধরনের বিকৃত মানুষ সৃষ্টি হয়েছে যারা কাউকে নির্যাতন করতে পারলে উল্লসিত হয়। এখন এটা মোকাবিলার জন্য সমাজের সকল তরফ থেকেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রাজনৈতিকভাবে, সামাজিকভাবে, ধর্মীয়ভাবে, নৈতিকভাবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগত অবস্থান থেকে এভাবে সকল অবস্থান থেকেই প্রতিরোধ করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
মানবাধিকার সংগঠন মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম আঁখি বলেন, আজ আমাদের সবাইকে জেগে উঠতে হবে। সারাদেশে ছাত্রছাত্রীরা যে প্রতিবাদ জানাচ্ছে তাতে আমাদের সবাইকে একাত্মতা ঘোষণা করা দরকার।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মনোবিজ্ঞানী কমান্ডার (অব.) সাব্বির আহমেদ বলেন, একসময় আমাদের দেশ ছিল দারিদ্র্যসীমার নিচে। আর এখন সে দেশটা চলে গেছে চরিত্রসীমার নিচে, যা সত্যি দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আমাদের এখনই সোচ্চার হতে হবে।
এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মেজর (অব.) ডা. আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, বর্তমান সময়ের ধর্ষকরা নিজেদের রাষ্ট্রের মালিক মনে করে, তাই তারা নারীদের ভোগ করার অবাধ লাইসেন্স ধারণ করেছে। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। নারী হচ্ছে- আমার মা, বোন, স্ত্রী, মেয়ে, ভাগ্নি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মন্জু, যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুর রহমান কচি, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, কেন্দ্রীয় নেতা বি এম নাজমুল হক প্রমুখ।