প্রত্যয় নিউজডেস্ক: রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিল আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তার বিরুদ্ধে আনা প্রথম ডিগ্রি হত্যা মামলার বিষয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় সময় ১৩ অক্টোবর নিউইয়র্কের একটি আদালতে স্কাইপের মাধ্যমে বিচারকের কাছে প্রথম ডিগ্রি হত্যা মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন রাইকার্স আইল্যান্ড কারাগারে থাকা হ্যাসপিল। আগামী ১১ জানুয়ারি আবারও এই মামলার শুনানি দিন ধার্য করেছেন আদালত।
ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির অফিস জানিয়েছে, ফাহিম সালেহ হত্যার ঘটনায় শুরুতে ২১ বছর বয়সী হ্যাসপিলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ডিগ্রি হত্যা মামলার অভিযোগ আনা হয়। পরে বিচারক তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রথম ও দ্বিতীয় হত্যা মামলায় উন্নীত করেন।
এছাড়া হ্যাসপিলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ডিগ্রি চুরি, দ্বিতীয় ডিগ্রিতে খুনের আলামত নষ্ট ও গোপনের অভিযোগ রয়েছে।
হ্যাসপিলের ফুফু মারজোরি সাইন জানান, শিশুকাল থেকেই অত্যন্ত চুপচাপ প্রকৃতির। সে একটা সময় বেশ বিরক্তিকর হয়ে উঠেছিল হ্যাসপিল। পরে তাকে পালক বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেয়া হয়। সে সবসময় নিরুদ্বিগ্ন থাকত। মন যা চাইত তা-ই করত। হ্যাসপিলের উদ্বেগহীন থাকার স্বভাব অবশ্য এখনও যায়নি।
তিনি জানান, ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ড ও গ্রেফতার হওয়ার মাঝের সময়টাতেও বেশ নিরুদ্বিগ্নভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে এ অভিযুক্তকে। একাধিক ভিডিও ফুটেজে তাকে ফাহিমের বাসা থেকে মাত্র মাইলখানেক দূরে ম্যানহাটানের নোহো এলাকায় খোশমেজাজে ঘুরতে দেখা গেছে।
এমনকি, ফাহিমের কাছ থেকে চুরি করা একটি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে একগুচ্ছ জন্মদিনের বেলুনও কিনেছিলেন তিনি। পুলিশ তার কাছ থেকে ওই ক্রেডিট কার্ডটি উদ্ধার করেছে।
হ্যাসপিলের বিষয়ে নিউইয়র্ক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই লোকটি হচ্ছে আমেরিকার নতুন সাইকো, তবে হাবাগোবা।’
সম্প্রতি নিজের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ফাহিমের খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ উদ্ধার করে নিউইয়র্কের পুলিশ। তার হাত, পা, মাথা সব বিচ্ছিন্ন করা ছিল।
তদন্ত কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, ফাহিমকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে মরদেহ স্যুটকেসে ভরে গুম করার পরিকল্পনা ছিল খুনির। তবে, কেউ এসে পড়ায় হয়তো কাজ অস্পূর্ণ রেখেই পালিয়ে যায় সে।
জানা গেছে, ফাহিমের বাবা সালেহ উদ্দিন বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে আর মা নোয়াখালীতে। ফাহিম ইনফরমেশন সিস্টেম বিষয়ে আমেরিকার বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
গত বছর প্রায় সাড়ে ২২ লাখ ডলার দিয়ে ম্যানহাটনের ডাউনটাউনে একটি অ্যাপার্টমেন্টটি কিনেছিলেন তিনি। পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও নাইজেরিয়া এবং কলম্বিয়ায় এমন আরও দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানির মালিক ছিলেন ফাহিম সালেহ।
ফাহিমের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ ডলার চুরি করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী টাইরিস হাসপিল। তবে, এ ঘটনায় কোনও আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে হ্যাসপিলকে কিস্তিতে টাকা ফেরত দেয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন ফাহিম।
তদন্তকালে গোয়েন্দারা ফাহিমের ফোনে পাওয়া একটি টেক্সট মেসেজ থেকে এই টাকা চুরির বিষয়ে জানতে পেরে হ্যাসপিলের ওপর নজরদারি শুরু করেন। পরে, গত শুক্রবার (১৭ জুলাই) গ্রেফতার করা হয় তাকে। গ্রেফতারের পরপরই হ্যাসপিলের বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগ আনা হয়।